বঙ্গোপসাগরের বুকে আবারো একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। আন্দামান সাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ আগামী ১৬ থেকে ২২ মে’র মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, যার নাম হতে পারে ‘শক্তি’।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে, বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রাম এলাকায় এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে ‘শক্তি’ (Shakti), যা শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত। এর অর্থ হলো “Power” বা “শক্তি”, যা দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ পরিচিত একটি শব্দ। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, যার ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে, যা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীবন্দর, চরাঞ্চল ও নিম্নভূমিগুলো সম্পূর্ণ প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়ি ও জীবনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’, সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে যেসব অঞ্চল
উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা, বিশেষ করে যারা ২০০৭ সালের সিডর, ২০০৯ সালের আইলা ও ২০২০ সালের আম্পানের মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা ধারণ করছেন, তারা ইতিমধ্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং পরিবারের জন্য জরুরি সামগ্রী সংগ্রহ করছেন।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। খুলনা ও চট্টগ্রাম জেলায় মোট প্রায় ২,৪০০টির বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার, নিরাপদ পানি ও ওষুধের মজুত গড়ে তোলা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসন নিয়মিত সতর্কতা ও জরুরি বার্তা প্রচার করছে।
তবে কিছু প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা এবং বিদ্যুৎ, পানি ও নিরাপদ শৌচাগারের মতো মৌলিক সুবিধার অভাব জরুরি ভিত্তিতে সমাধানের দাবি রাখে। এছাড়া, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের নিরাপত্তা এবং মোবাইল সিগনাল না থাকলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কার্যকরভাবে সতর্কতা বার্তা পৌঁছানোর বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অনেকে বলছেন, সতর্কতা পেতে পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
অতীতের সিডর, আইলা, মহাসেন ও আম্পানের মতো ঘূর্ণিঝড় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। স্থানীয় নেতৃত্বকে সক্রিয় করা, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রস্তুতি জোরদার করা, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করা এবং স্বেচ্ছাসেবক দল ও মোবাইল মেডিকেল ইউনিট তৈরি রাখা জরুরি। এছাড়া, আশ্রয়কেন্দ্রে নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ এবং অফলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা (মাইকিং, রেডিও) আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন।
ঘূর্ণিঝড় একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা এড়ানো সম্ভব নয়। তবে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়ে সক্রিয় ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সম্পদ ও জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
স্বাআলো/এস