নোয়াখালীর সদর উপজেলার একটি গ্রামে যৌতুকের টাকা না পেয়ে এক পুলিশ কনস্টেবল স্বামী তার স্ত্রীর বিবস্ত্র অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পর ওই গৃহবধূ লজ্জায় ও অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের নাম হাসান মাসুদ (২৭)। তিনি জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুজাহিদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে। বর্তমানে তিনি লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইনে কর্মরত আছেন বলে জানা যায়। তার বিপি নম্বর ৯৮১৮২১১৩৬৭।
মামলা ও ভুক্তভোগী পরিবারের সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী গৃহবধূ সদর উপজেলার একটি গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আনসার সৈনিকের ২৯ বছর বয়সী মেয়ে এবং নিজেও বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন সদস্য। ২০২২ সালে হাসান মাসুদ ও ওই গৃহবধূর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মাসুদের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন অজুহাতে গৃহবধূর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। বাধ্য হয়ে তিনি বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
অভিযোগ উঠেছে, মাসুদ তার পদোন্নতি ও পুলিশ ক্যান্টিনে ব্যবসার কথা বলে কৌশলে কয়েক ধাপে স্ত্রীর কাছ থেকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা দেওয়ার প্রমাণও সংরক্ষিত আছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে। এরপর মাসুদ স্ত্রীর কাছে আরও ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন। স্বামী কর্মস্থলে থাকলেও ইমো ও মেসেঞ্জারে ভিডিও কল করে স্ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় আসতে বাধ্য করতেন এবং সেই মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও গোপনে নিজের মুঠোফোনে ধারণ করে রাখতেন।
নোয়াখালীতে মাদরাসা থেকে ছাত্রের লাশ উদ্ধার
ভুক্তভোগী নারী জানান, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন ও মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর তিনি নোয়াখালীর ৩নং আমলী আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মাসুদ, তার বোন নাজমা বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে থাকে। মামলা তুলে না নেওয়ায় স্বামী মাসুদ, তার বোন ফেরদৌসী বেগম এবং ভাই জহিরুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ফেক টিকটক ও ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বিশেষ মুহূর্তের বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে গেলেও পুলিশের স্বামীর প্রভাবে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সাইবার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে স্বামীসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আদালত নোয়াখালী সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। তবে ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদবিরের কারণে নোয়াখালী সিআইডির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম ভুক্তভোগীর প্রতিকূলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। শুধু তাই নয়, পুলিশ সদস্যের বোন বাদী হয়ে উল্টো ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলার সাক্ষীদেরসহ মোট ১৪ জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ কনস্টেবল হাসান মাসুদ বলেন, এই বিষয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না। যা হবার আদালতেই হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন বলে জানান।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) আকতার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, তার কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। হাসান মাহমুদ নামে কোনো পুলিশ কনস্টেবল লক্ষ্মীপুরে কর্মরত আছেন কিনা, সে বিষয়েও তার জানা নেই। তবে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
এই ঘটনায় ওই গ্রামে এবং ভুক্তভোগী পরিবারে তীব্র ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্বাআলো/এস