জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে পশুর হাট। হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড়। কোরবানির পশুর দামও ভালো বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। পশু কিনতে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে দর কষাকষি। চুয়াডাঙ্গার শিয়ালমারী পশুহাট, ডুগডুগি পশুহাট, মুন্সিগঞ্জ পশুহাট এবং আলমডাঙ্গা পশুহাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) শিয়ালমারী পশুহাটে গরু বিক্রি করতে আসা জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আকুব্বর হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ গরু ও ছাগলের দাম তুলনামূলক বেশি। আজকে হাটে পাঁচটি গরু এনেছিলাম বিক্রির জন্য। ১৫ হাজার টাকা লাভে গরুগুলো বিক্রি করেছি।
চুয়াডাঙ্গায় বাসের ধাক্কায় ব্যবসায়ী নিহত
উথলী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী হাসর আলী বলেন, অন্য দিনের তুলনায় আজকের হাটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা এসেছেন। এ কারণে গরুর দামও বেশি। আজকে হাটে পাঁচটা গরু এনেছিলাম। সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে গেছে। লাভও বেশি হয়েছে। গরুর দাম এরকম থাকলে গরু পালনকারীরা লাভবান হবেন।হাটে পশু কিনতে আসা ওয়ালিউল্লা নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর খামার থেকে গরু কিনে থাকি। খামার থেকে গরু কিনলে যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোয়াতে হয় না। তবে এ বছর গরুর দামটা একটু বেশি।
হাটে গরু কিনতে আসা আলাউদ্দিন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, কোরবানি করার জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এ বছর গরু প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহেতু কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হচ্ছে।
জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া গ্রামের খামারি লিয়াকত আলী বলেন, চার বছর আগে খামার গড়েছিলাম। খামারে মোট ২০ টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি গরুর দাম বর্তমান বাজারমূল্য থাকে তাহলে খামারিরা লাভবান হবেন।
চুয়াডাঙ্গায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে জমিসহ ঘর প্রদান
একই উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের খামারি আব্দার আলী বলেন, পাঁচ বছর আগে শখের বশে একটি খামার তৈরি করি। আমার খামারে বর্তমানে ১০টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি গরু বিক্রি করেছি। বাকি গরু ঈদের মধ্য বিক্রির আশা করছি। যদি এমন দাম থাকে তাহলে লাভবান হতে পারবো।
জীবননগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের খামারি আবুল বাশার বলেন, আমার খামারে ৪০টি কোরবানি উপযুক্ত গরু ছিল। ৩৫টি গরু এরই মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এখনো আমার খামারে ১০টি গরু আছে। এই গরুগুলো আরো সাইজে বড়। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না লাভ হবে, না লোকসান হবে। তিনি আরো বলেন, খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি। এলাকায় বিক্রি উপযুক্ত কোরবানির গরু গত বছরের তুলনায় কম। বেচাকেনা গত বছরের তুলনায় কম।
চুয়াডাঙ্গায় সংবাদকর্মীকে হেনস্তা
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার ৯১৭টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় দুই হাজার ৬৭৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় তিন হাজার ৫৯৯টি, দামুড়হুদা উপজেলায় এক হাজার ৯২৮টি এবং জীবননগর উপজেলায় দুই হাজার ৭১৪টি।
এসব খামারে কোরবানি উপলক্ষে দুই লাখ ১১ হাজার ৮৭৯ টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৫৪ হাজার ৮৯১টি, মহিষ ১৬০টি, ছাগল এক লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬টি, ভেড়া তিন হাজার ৯২৫টি এবং অন্যান্য সাতটি। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি। সে হিসাবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৫৩ হাজার ২৩টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এসব পশু ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে।
শিয়ালমারি পশুহাটের ইজারাদার ফরহাদ হোসেন বলেন, সাপ্তাহিক এ পশুহাটে আজকে অনেক পশু আমদানি হয়েছে। তবে বেচা কেনা তুলনামূলক কম। গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া কেনাবেচার খাজনা সরকার নির্ধারিত মূল্যই নেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার শিয়ালমারী পশুহাট পরিদর্শন করেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ। হাট ইজারাদার কতৃপক্ষ সরকার নির্ধারিত ছাড়া বেশি খাজনা নিচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করেন এবং জনদূর্ভোগ এড়াতে রাস্তা যানজটমুক্ত রাখার জন্য নির্দেশ দেন।
চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সোনার বারসহ আটক ১
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় এবার কোরবানির জন্য ৫৪ হাজার ৯৭৯টি গরু ও মহিষ মোজাতাজা করা হয়েছে। এছাড়া এবার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮২১টি ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। খামারগুলোতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে খামারিদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন পশুহাট ও খামারগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। খামারিদের পালনকরা পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা পূরণ করবে। খামারিরা এবার কোরবানির পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান জানান, পশুহাটগুলোর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। জাল নোট ঠেকানোর জন্য পুলিশের নজরধারী রয়েছে। এছাড়া ব্যাপারীদের পশু আনা-নেয়ার ক্ষেত্রেও পুলিশের বাড়তি নজরধারী রয়েছে।
স্বাআলো/এস