খুলনা বিভাগ

আসামি গ্রেফতারের প্রতিবাদে শৈলকুপা থানায় হামলা: এলাকা রণক্ষেত্র, পুলিশের ফাঁকা গুলি বর্ষণ

| June 9, 2024

জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ: জেলার শৈলকুপা থানায় হামলা করে গ্রেফতারকৃত এজাহারভুক্ত আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়েছে।

এ ঘটনায় ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০/২৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে।

রবিবার (৯ জুন) বিকেলে এ হামলা ঘটনা ঘটে।

আহতদের মধ্যে আব্দুস সালাম, ইকবাল হেসাইন ও তরিকুল ইসলাম মিনাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর এক পুলিশ সদস্যকে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। এছাড়া বাকিদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

ঝিনাইদহে বন্ধের দিন বিদ্যালয়ের গাছ বেচে দিলেন প্রধান শিক্ষক 

গ্রেফতারকৃত মুস্তাক শিকদার মারামারি মামলার এজাহারভূক্ত আসামি। সে ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের মৃত আব্দুস সাত্তার শিকদারের ছেলে।

খবর পেয়ে ঝিনাইদহ থেকে পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান (বিপিএম পিপিএম সেবা) ও অতিরিক্ত পুলি সুপার (ক্রাইম) ইমরান জাকারিয়া শৈলকুপা থানায় ছুটে যান। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন।

জানা গেছে, শৈলকুপা উপজেলার ধাওড়া গ্রামের মুস্তাক সিকদার মারামারি মামলার এজাহার নামীয় আসামি। রবিবার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর বিকেলের দিকে ধলহারা গ্রাম এবং আশেপাশের পাঁচ শতাধিক লোকজন ঢাল ভেলা লাঠি সোটা রাম দা নিয়ে থানায় হামলা চালায়। হামলাকারীরা চারদিক থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। হামলাকারীদের লাঠির আঘাত ও ইটপাটকেলের আঘাতে ১০ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে দ্রুত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে একজনকে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় হামলাকারীরাও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। সেসময় উত্তেজনা আরো ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পরো থানা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। পুলিশ ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্র ভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝিনাইদহে বৃদ্ধের গলাকাটা লাশ উদ্ধার

লোকজন জানিয়েছেন, গত ৭ জুন সন্ধ্যায় শৈলকুপা কবিরপুরে ঝিনাইদহ ১ আসনের (উপনির্বাচনে) নবনির্বাচিত এমপি নায়েব আলী জোয়ার্দ্দারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিলো।

ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, শৈলকুপা পৌরসভা মেয়র কাজী আশরাফুল আজম। তিনি বক্তৃতার এক পর্যায়ে শৈলকুপা থানার ওসি সফিকুল আজম চৌধুরীকে গলায় গামছা দিয়ে বিতাড়িত করার ঘোষনা দেন।

তিনি বলেন, এই দুর্নীতিবাজ ওসি সন্ত্রাস করছে। আমরা চাই অতি সত্ত্বর দুর্নীতিবাজ প্রশাসন বিশেষ করে এই ওসি এখান থেকে চলে যাক। তা না হলে গালায় গামছা বেঁধে তাকে আমরা বিতাড়িত করবো। তার ওই বক্তব্যের পর থেকেই শৈলকুপায় পুলিশ বিরোধী একটি মোর্চা গড়ে ওঠে। একজন মারামারি মামলার আসামি ছিনতাই করতে পাঁচ শতাধিক মানুষের এই দু:সাহস মেয়র আশরাফুল আজমের ওই বক্তব্যেরই জের বলে অনেকেই জানিয়েছেন। এ ছাড়া ওই বক্ত্যব্যের জন্য মেয়র আশরাফুল আজমের বিরুধ্যে তদন্তপুর্বক আইনগত ব্যবস্থায় নেয়ার জন্য রবিবার ঝিনাইদহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি ঝিনাইদহ ১ আসনের উপনির্বাচন ও শৈলকুপা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই শৈলকুপায় পরাজিত প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষ অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী ভোটের পর বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। তাদেরকে বাড়ি-ঘরে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। তারা বাড়ি ওঠার দাবিতে এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন। শৈলকুপা থানার ওসি ওই সমস্ত বাড়ি-ঘরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তার বিরুদ্ধে এতো ক্ষোভ বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যপারে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান জানান, রবিবার মুস্তাক নামে গ্রেফতারকৃত একজন এজাহারনামীয় আসামিকে শৈলকুপা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। বিকেলের দিকে থানা ঘেরাও করে তাকে ছিনতাই করার চেষ্টা চালানো হয়। সেসময় হামলাকারীরা থানার ভিতরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তাদেরকে থামাতে গেলে তারা ঢাল ভেলা রামদা সড়কি নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। সেসময় আমাদের অন্তত ১০ জন পুলিশ গুরুতর আহত হয়। আহতদেরকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান চলছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত আছে বলে তিনি জানান।

স্বাআলো/এস

Debu Mallick