ঢাকা অফিস: বেশ কিছুদিন হলো বাজারে সবজির দাম চড়া। তার মধ্যে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে। বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম আরো বাড়ানো হয়েছে। বাজারে বেশিরভাগ সবজি কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি। কিছু সবজির দাম আবার কেজিপ্রতি শতকও ছাড়িয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে স্বস্তির বার্তা নেই কাঁচা মরিচের দামেও। অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে কাঁচা মরিচের দাম। সপ্তাহ দুই আগে ৩০০ টাকা ছুঁয়েছিলো এ পণ্যটির দাম। তবে গত সপ্তাহে সেই দাম কিছুটা কমলেও এখন আবারো বাড়ছে। এক্ষেত্রেও বৃষ্টির অজুহাত সামনে আসছে। শুক্রবার মানভেদে বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা কয়েকদিন আগেও ছিলো ২০০ টাকার মধ্যে।
শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর রামপুরা, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সবজির সঙ্গে নতুন করে দাম বাড়ার দৌড়ে রয়েছে পেঁয়াজ। শতক ছাড়িয়ে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এছাড়া দেশি হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে। পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে।
সবজির দাম বাড়ার পেছনে টানা বৃষ্টিকে কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, যেসব এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি আসে সেই এলাকাগুলোতে কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে সবজির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে খেতে পানি জমে সবজি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যে কারণে সবজির জোগান কমে দাম বেড়েছে।
তবে ব্যবসায়ীদের এসব যুক্তিকে অজুহাত বলে মনে করছেন ক্রেতারা। সেগুনবাগিচা বাজারে ইয়াসিন আলী নামে একজন ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টি হোক, গরম হোক কিংবা শীত- এদেশে সব কিছুরই দাম শুধু বাড়ে। কখনো কোনো কিছুর ভালো উৎপাদন হলেও বাজারে দাম কমে না।
মহাসড়কে সবজি ঢেলে অবরোধের প্রতিবাদ কৃষকদের
তিনি বলেন, টমেটোর মতো সবজি কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। আলু ৭০ টাকা, বরবটি, উস্তা করলার দাম চাচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। এ যেন মগের মুল্লুক। এত দামে সবজি কিনে খাওয়া আমার মতো অনেক মধ্যবিত্তের জন্য অসাধ্যকর হয়ে পড়ছে।
সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে বরবটি, গাজর, বেগুন, কচুরমুখি ও করলার। প্রতি কেজি বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুরমুখি, বেগুন ও করলার কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দর কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকার মতো।
এছাড়া কাকরোলের কেজি ৮০ থেকে ১০০, পটল ও ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৭০, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা পেপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। গাজরের কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ও টমেটো ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, টানা অস্থিরতা দেখা গেছে আলুর বাজারেও। এ নিত্যপণ্যটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে আলুর কেজি ছিলো ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে দাম প্রায় আরো পাঁচ টাকা বেড়েছে।
আলুর এ দাম সাধারণত ক্রেতার জন্য একেবারেই অস্বাভাবিক। গত বছরের এসময়ে আলুর কেজি ছিলো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে আলুর দাম।
চৌগাছায় উৎপাদিত পটল কি শেষমেষ গোখাদ্য হবে?
চড়া দামে থাকা ডিমের বাজারও অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম তুলনামূলক অনেকটাই স্থিতিশীল। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি কোথাও ৭৫০ কোথাও ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো নিত্যপণ্যগুলো আগের চড়া দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে।
স্বাআলো/এস/বি