দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই আজ ও কাল

স্পোর্টস ডেস্ক: বার্লিন টু মায়ামি। আটলান্টিকের এপার থেকে ওপারের দুই শহরের দূরত্ব প্রায় আট হাজার কিলোমিটার, উড়ে যেতে লাগে ১২ ঘণ্টা। গুগল সার্চ ইঞ্জিনের কল্যাণে এখন সবই হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞান আজ এই দুই মহাদেশের শহর দুইটিকে বাংলাদেশে যুক্ত করবে টিভি পর্দায়।

সৌজন্যে ফুটবল। সময় পার্থক্যের কারণে মায়ামির মহারণ গড়াবে আগামীকাল ভোরে। তার আগেই বার্লিনে নির্ধারিত হয়ে যাবে ফুটবলে ইউরোপসেরার মুকুট। কোন শহরে কোন কোন দল লড়ছে, তা সবার জানা।

কোপা আমেরিকা আর ইউরোর ফাইনালের কাউন্ট ডাউন তো শুরু হয়ে গেছে সেই সেমিফাইনালের পরই। অনেকে হয়তো ঘড়ির অ্যালার্মও সেট করে ফেলেছে। আজ রাত ১টায় বার্লিনে স্পেন বনাম ইংল্যান্ড আর রাত পেরিয়ে সকাল ৬টায় মায়ামিতে আর্জেন্টিনা মুকুট রক্ষার লড়াইয়ে নামবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। এই দুই মঞ্চের বিজয়ী পরের বিশ্বকাপে নামবে ফেভারিটের তকমা গায়ে।

বিশ্বকাপ নয়, স্রেফ মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। তবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনের (টিএসসি) জায়ান্ট স্ক্রিনকে ঘিরে জমে ওঠা ভিড় দেখে রাত না ভোর বোঝা মুশকিল। তবে খুব বোঝা যায় ‘ক্রিকেটের দেশ’ বাংলাদেশের ধমনিতে ফুটবল। দর্শকদের এত বড় জমায়েত দেশের আর কোথাও হয় না।

সেই ভিড়ের ‘পালস’ বলছে, ইউরোর ফাইনালে সমর্থক ঝুঁকে থাকবে স্পেনের দিকে। হালে ইংলিশ ক্লাব ফুটবলের টানে হ্যারি কেইনদেরও সমর্থক আছে। তবে লিওনেল মেসি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোরা ছেড়ে গেলেও রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার সমর্থকগোষ্ঠী আছে। সেই সমর্থনের পালে আরো জোর হাওয়া দিয়েছেন লামিন ইয়ামাল। তুলনায় জুড বেলিংহাম কিংবা কেইনরা এখনো অত সমর্থন জড়ো করতে পারেননি।

ঝিনাইদহে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ভাগনেকে মারধর, মেয়র ও এমপির পিএসসহ ১৩ জনের নামে মামলা

সকালের পূর্বাভাস অবশ্য দিবালোকের মতো পরিষ্কার। মায়ামির দ্য হার্ড রক স্টেডিয়ামে ফাইনালের বিরতির সময় সংগীত পরিবেশন করবেন শাকিরা। ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়া শাকিরার সেই মিনিট দশেকের পারফরম্যান্সের সময়টাই হয়তো কলম্বিয়া স্থান পাবে টিএসসির জায়ান্ট স্ক্রিন কিংবা আপনার টিভি সেটে। লাস্যময়ী শিল্পী মঞ্চ থেকে নামতেই আগের মতো বাংলাদেশের হৃদস্পন্দন মেসি মেসি করবে! কলম্বিয়া দূরের কথা, মেসির আর্জেন্টিনার সঙ্গে লড়াইয়ে জেতার সামর্থ্য বাংলাদেশে আপাতত আর কোনো দলের সমর্থকগোষ্ঠীরই নেই।

তবু এই লড়াই তো আর দশটা ম্যাচের মতো নয়, মুকুট জয়ের ম্যাচ। একটা জাদুকরী মুহূর্ত উল্টে দিতে পারে সব পূর্বাভাস। এবারের ইউরোয় সবচেয়ে দুর্ধর্ষ দল মনে হচ্ছে স্পেনকে। লামিন ইয়ামাল ও উইলিয়ামসদের মতো তরুণদের ‘ফ্যান ক্লাব’ও খোলা হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বাংলাদেশে। কিন্তু সেমিফাইনালে যে ম্যাচ পরিস্থিতি থেকে ফাইনালের টিকিট কাটা ইংল্যান্ডও বাজিমাত করার ক্ষমতা রাখে। সেই কবে, ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর বিশ্বকাপ, এমনকি ইউরোপের সেরাও হতে পারেনি দলটি। প্রথমবার ইউরোপসেরার স্বাদ পেতে নিশ্চিতভাবেই মরিয়া ইংল্যান্ড। অভিজ্ঞ কেইন, নাকি তরুণ বেলিংহাম অথবা ফিল ফোডেন—এঁদের যে কেউই ইংলিশ স্বপ্নপূরণের নায়ক হতে পারেন। তবে এই আসরে দলীয় নৈপুণ্য আর ভারসাম্য বিবেচনায় স্পেন স্পষ্টতই ফেভারিট।

মাঠের ফুটবলে যেমন কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কফিনে কলম্বিয়াকে পেরেক ঠুকতে দেখছে অনেকেই। সম্ভাব্য এই পেরেক ঠোকার পরিকল্পনাও আবার সাজাচ্ছেন এক আর্জেন্টাইন—নেস্তর লরেন্সো, কলম্বিয়ার কোচ। হামেস রোদ্রিগেস এ দেশে পরিচিত নাম। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেই তিনি যেন ফিরে এসেছেন স্বরূপে। সমান আতঙ্কের লুইস দিয়াস। কলম্বিয়া ঝট করে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। শরীরী ফুটবলে অশরীরী! ১০ জনের দল নিয়েও উরুগুয়েকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে। মেসিকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকে রাখার ছকও নাকি করা হয়ে গেছে লরেন্সোর। ইউরোয় স্পেনের প্রায় সমান রেটিং কোপায় পাচ্ছে কলম্বিয়া।

কিন্তু দিনশেষে এটা ফাইনাল। ফাইনালের স্নায়ুচাপ জয় করে অভিজ্ঞতা। টগবগে কলম্বিয়ার চেয়ে এই একটি জায়গায় বড় ব্যবধানে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। ‘বিচ্ছিন্ন’ মেসি যেকোনো সময় উপহার দিতে পারেন সেই জাদুকরী মুহূর্ত। বিদায়বেলায় আনহেল দি মারিয়া সেই মুহূর্তের অপেক্ষায়ই থাকবেন। আর শূন্য থেকে শিখরে ওঠা আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনির রণপরিকল্পনায় আস্থা না থাকার তো কোনো কারণই নেই!

নড়াইলে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত

ফুটবলের এই রাত ভোর করা রোমাঞ্চের মাঝে অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টে এবারের উইম্বলডন ফাইনালে নোভাক জোকোভিচের মুখোমুখি হচ্ছেন কার্লোস আলকারাজ। গতবারের ফাইনালে জোকোভিচকে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিলেন আলকারাজ। এবারও জিততে চান বিশেষ একটি কারণে, ‘মজার একটি দিন কাটবে স্পেনের জনগণের। আমার এবং ইউরোর ফাইনাল উপভোগ করবে তারা। একজন স্প্যানিয়ার্ডের জন্য দুর্দান্ত একটি রবিবার।’

ক্রীড়ানুরাগীদের জন্য সত্যিকার অর্থেই ‘সুপার সানডে’। উইম্বলডনের শিরোপা নিশ্চিত হতে হতে বার্লিন দেখে আড়মোড়া ভেঙে মায়ামিতে বস্ফািরিত জনতার চোখের সামনে মেসি, দি মারিয়া, রোদ্রিগেজ, স্কালোনি, লরেন্সোদের প্রতিটি পদক্ষেপ, অভিব্যক্তিতে গর্জাবে টিএসসির জায়ান্ট স্ক্রিন থেকে ঘরে ঘরে। জীবনের রুটিন এভাবেই বদলে দেয় ফুটবল, হাসায় আবার কাঁদায়ও।

স্বাআলো/এস/বি

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

বিএসপির সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ (বিএসপি) যশোর এর ২৪৫...

ফের পরীর সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন রাজের

ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি ও নায়ক শরিফুল রাজের...

বেনাপোল কাস্টমসের অভিযানে অবৈধ পণ্যর ট্রাক আটক

মিলন হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: বেনাপোল বন্দরের ৩৫ নম্বর...

কুয়াশায় নিরাপদে গাড়ি চালাতে ৪ নির্দেশনা

ঘন কুয়াশার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। এ অবস্থায়...