ঢাকা অফিস: আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় কোন্দল মেটাতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) দেয়া প্রার্থীদের সরাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রের নিষেধ সত্ত্বেও আত্মীয়দের অনেকে নির্বাচন থেকে সরবেন না।
মন্ত্রী-এমপির স্বজন যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের তাঁদের তালিকা করতে বলা হয়েছে।
এই তালিকা অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী ফোরাম।
আত্মীয়দের নির্বাচন করা নিয়ে কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে ভিন্নমতও রয়েছে। দলীয় একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, মন্ত্রী-এমপির পাশাপাশি দলে কেন্দ্রীয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতার আত্মীয়রা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে।
অনেকে চাইছেন, আত্মীয়রা বিনা বাধায় নির্বাচনে আসুক। তাঁদের দাবি, দলের পক্ষ থেকে সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাই শুধু আত্মীয় পরিচয়ের কারণে কারো প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ প্রার্থীর জন্য যুক্তিসংগত হবে না।
দলীয় সূত্র বলছে, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে একাধিক মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে কেন্দ্র থেকে ফোনে কথা বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের ভাগ্নেকে নির্বাচনে প্রার্থী না হতে ফোন করে বলা হয়েছে বলেও সূত্র উল্লেখ করে।
বিষয়টি যাচাই করতে এই তিন প্রার্থীর সঙ্গে কালের কণ্ঠ যোগাযোগ করে। তবে শুধু শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে নির্বাচন না করতে আমাকে কোনো ফোন দেয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, গতকাল দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে ওবায়দুল কাদের ‘মন্ত্রী-এমপির স্বজন যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের তালিকা করার নির্দেশ দেন।’ যদিও সেই তালিকার ভবিষ্যতের বিষয়ে কেন্দ্র পরে সিদ্ধান্ত নেবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য তালিকা তৈরি করা।
যদিও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রী-এমপির কাছের আত্মীয়-স্বজনদের প্রার্থী হতে দল থেকে মানা করা হয়েছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ পালন হবে—এটা বিশ্বাস করি।
কেন এমন সিদ্ধান্ত
উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে এমপিদের প্রভাব বিস্তার কমানো কঠিন হচ্ছিল। নির্বাচনে কোনো রকম প্রভাব বিস্তার না করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাও অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছিল। এ ব্যাপারে এমপিদের বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবু এমপিদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ থামছিল না।
আবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমপিদের মধ্যেও বিভক্তি তৈরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি এবং দলের স্বতন্ত্র এমপিদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। ব্যক্তির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করতে দলের অবস্থান তৃণমূলে দুর্বল হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দিনের মধ্যে দল থেকে এমপিদের বার্তা দেওয়ার বিষয়ে গত বুধবার কালের কণ্ঠকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা।
মাঠের ত্যাগীদের সুযোগ দিতে চায় দল
উপজেলা নির্বাচনেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনেও ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এতে দলের মাঠ পর্যায়ে বিভক্তি ও কোন্দল বাড়ার পাশাপাশি মাঠের ত্যাগী নেতারা নির্বাচনে দলের সমর্থন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গত বুধবার প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪টি উপজেলায় ৯৫১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৩ জনের।
১৫০টি উপজেলায় তিনটি পদে এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ধাপের ভোটে ১৫০টি উপজেলার মধ্যে ১৪১টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের অন্তত ৪৬৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দেন। গড় হিসাবে প্রতি উপজেলায় তিনজনের বেশি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশ দিলে মাঠের ত্যাগী নেতাকর্মীরা সুফল পাবেন। এমপি-মন্ত্রীদের পরিবারের বাইরের নেতারা ভোট করার সুযোগ পাবেন। এটা দলের সুশাসনের জন্যও ভালো হবে। কর্মীরাও মূল্যায়ন পাবে।
স্বাআলো/এস