নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাগেরহাটের পাইকারী ও খুচরা বাজারে সবজির মূল্য চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। সবজির দাম বৃদ্ধি হওয়ায় হতাশায় পড়েছে সকল শ্রেণির ভোক্তারা।
গত এক সপ্তাহে সব ধরনের সবজির দামও কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। সাধ্যের মধ্যে সবজি কিনতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিম্ম আয়ের মানুষ ও ভোক্তারা।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি বিরামহীন বৃষ্টির কারণে শীত মৌসুমের অগ্রীম সবজি না হওয়ায় মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে গেছে। তবেশীতকালীন সবজি বাজারে আসলে মূল্য কমে যাবে।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বাগেরহাট শহরের সবজির বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৪৮ টাকা, সিম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, করোলা ৬০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, উস্তে ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ মানভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ও প্রতি পিস লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আবার ভ্যানযোগে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতারা আরো বেশি দামে সবজি বিক্রি করছে।
শহরের মিঠাপুকুর পাড় ও নুর মসজিদ মোড় এলাকায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বেগুন ১৩০ টাকাসহ অন্যান্য সবজি বাজারে তুলনায় বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম হটাৎ করে বেশি হওয়ায় অস্বস্তি জানিয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।
সবজি ক্রেতা মনির হোসেন বলেন, সপ্তাহ ধরে একই রকমভাবে বাজারে বাড়তি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। কোনো কিছুরই দাম কমে না। যেখানে এক কেজি সবজি কিনবো সেখানে প্রকারভেদে আধাকেজি ও আড়াইশো গ্রাম কিনতে হচ্ছে। সাধ্যের মধ্যে না থাকায় আমার মত অনেক ক্রেতা একইভাবে সবজি কিনে বাড়ি ফিরছেন।
সরকারি চাকরিজীবী রনজিৎ নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজার এখন সহনীয় অবস্থায় নেই। এত দাম দিয়ে সবজি কিনতে হবে বুঝে উঠতে পারছি না। আগের তুলনায় প্রতি কেজি সবজি প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকায় কিনতে হলো। সবমিলিয়ে বাজারে সবজির দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
সবজি বিক্রেতা ইলিয়াছ বলেন, সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার একই রকম যাচ্ছে। বাজার ভেদে কোনো কোনো সবজির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কম-বেশি হয়। পাইকারি বাজার থেকে মাল কেনার পর খাজনা ও পরিবহন খরচ হয়। সে কারণে লাভ রেখে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। তবে শীত মৌসুম না হওয়ায় কিছু কিছু সবজির বাড়তি দাম যাচ্ছে। এর কারণ হলো বাজারে সরবরাহ খুবই কম তাই দাম একুট বাড়তি।
সবজির পাইকারী বিক্রেতা সরদার এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বলেন, কিছু সবজি অতিরিক্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, এর কারণ হিসবে উৎপাদন কমে গেছে। আগের তুলনায় সবজি সরবরাহ অনেক কম। আশা করি এক মাসের মধ্যে শীতকালীন সবজি বাজারে আসা শুরু হলে দাম আগের মত হবে যাবে।
পাইকারী বিক্রেতা মল্লিক আতিয়ার রহমান বলেন, খুলনা ও যশোর থেকে সবজি আনতে যে পরিমান পরিবহন ব্যায় এবং সবজি বিনষ্ট হওয়ার অংশ বাদ দিয়ে মুনাফা করতে একটু বেশি মূল্যে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। আর খুচরা বিক্রেতারা খদ্দের বুঝে মূল্য কম-বেশি নিয়ে বিক্রি করছে। তবে সবজি উৎপাদনকারীরা তুলনামূলক মূল্য বেশি পাচ্ছে না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, সবজির উৎপাদন কম বলে দাবি করছেন আড়ৎদাররা। তারপরও নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মূল্য তালিকা দেখে অসংগতি থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাআলো/এসএস