শ্রীলঙ্কা স্টাইলে গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিলো: কাদের

ঢাকা অফিস:কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংস পরিস্থিতিতে ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি না করলে ‘শ্রীলঙ্কা স্টাইলে’ গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ বিষয়ে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনাদের (বিএনপি) নৃশংসতা হানাদার বাহিনীকে হার মানিয়েছে। ক্ষমতার জন্য লন্ডনের পলাতক (তারেক রহমান)…গণ–অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শ্রীলঙ্কা স্টাইলে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি দখল করার টার্গেটও ওই রাতে ছিলো। যদি কারফিউ জারি না হতো। এই প্ল্যান তাদের ছিলো। শ্রীলঙ্কা স্টাইলে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করা, অভ্যুত্থানের ওপর ভর করে হাওয়া ভবনের যুবরাজ ক্ষমতা দখল করতো। এটাই তো তাদের পরিকল্পনা।

রবিবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে ১০ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি করে ডাল ও লবণ এবং এক লিটার তেল দেয়া হয়।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপি এখন স্বাধীনতাবিরোধী, দেশবিরোধী, উন্নয়নবিরোধী অপশক্তিকে নিয়ে নতুন প্ল্যাটফর্ম করার কথা জানান দিচ্ছে। তাদের আহবানে তাদের দোসররা সাড়া দেবে—এটাই স্বাভাবিক। মাথা যেদিকে যাবে, লেজও সেদিকে যাবে। এতে নতুনত্ব কিছু নেই। তবে তাদের ঐক্য অগ্নিসন্ত্রাসের ঐক্য। দেশ ও দেশের উন্নয়ন ধ্বংসের ঐক্য।

বিএনপি-জামায়াতের জাতীয় ঐক্য প্রতিরোধের আহ্বান কাদেরের

চলমান সহিংসতা নিয়ে বিদেশিদের বিবৃতি দেয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশ থেকে অনেকেই বিবৃতি দিচ্ছেন। অনেক সংস্থা, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও আছেন। কারা সমন্বয় করছেন আমরা জানি। তাঁদেরকে বলবো, কারো প্ররোচনায় বিবৃতি না দিয়ে এখানে এসে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটিএর ধ্বংসলীলা দেখুন। বিআরটিসির ৪৪টি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, তা দেখুন। সাংবাদিক বন্ধুরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। বিবৃতি–যুদ্ধ চলছে দেশে-বিদেশে। যেখানে ওয়ান–ইলেভেনের কুশীলব ড. ইউনূসও যোগ দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারেন, আওয়ামী লীগ আক্রান্ত, আক্রমণকারী নয়। এখন বিবৃতি আসছে আক্রান্তদের বিরুদ্ধে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারবিরোধী হিসেবে মাঠে নেমেছেন বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অতীতে যিনি রাজনৈতিক দল খুলে ওয়ান–ইলেভেনে সাড়া পাননি, যাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলমান, যিনি পদ্মা সেতু নির্মাণে বিরোধিতা করেছেন, তিনি আবার সক্রিয়। আগে গোপনে করেছেন। এবার তিনিও এসেছেন।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বাইরে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। আমাদের বিবেক আমাদের চালায়। কোনো বিদেশি শক্তি নয়।

ড. ইউনূসকে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি (ইউনূস) ভারতকে অনুরোধ করেন শেখ হাসিনাকে থামাতে। শেখ হাসিনা আক্রান্ত, আমক্রণকারী নন। তাঁকে থামাবে কেন? আক্রমণকারীদের থামান। যাদের সঙ্গে আপনি আছেন। বিবৃতি দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপের জন্য বিদেশিদের প্রতি আহবান জানান ড. ইউনূস। তিনি সাক্ষাৎকারে নতুন নির্বাচন দাবি করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে থামাতে ভারতের প্রতি অনুরোধ জানানোর বক্তব্যকে আপত্তিকর বলেও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই দেশ স্বাধীন দেশ। স্বাধীন সার্বভৌম দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানো! কী বোঝাতে তিনি ভারতকে বলেছেন, খোলাসা করে ইউনূস সাহেব বলবেন কি? কোটা আন্দোলন, অগ্নিসন্ত্রাস, সাম্প্রতিক সহিংসতার সঙ্গে এই বিবৃতির সংযোগ আছে কি না, তা ভেবে দেখা দরকার বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ড. ইউনূস দেশের সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা লালন করেন না। তিনি আমাদের সঙ্গে নেই। আমরা তাঁর সঙ্গে কেমন করে থাকবো? জাতির কোনো সংকট, সম্ভাবনায় তাঁর ভূমিকা দেশের জনগণ দেখে না।

সেনাবাহিনী কোথাও গুলি করেনি দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কারফিউ দেয়ার সিদ্ধান্ত দিলেন, সেনাবাহিনী নামলো। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, সেনাবাহিনী কোথাও একটা গুলিও ছোড়েনি। অথচ অপবাদ দেয়া হচ্ছে, আমরা যেন হাজার হাজার মানুষ মেরে ফেলেছি। আজকে আমাদের মেরে ফেলা…গতকাল তালিকায় দেখেছি আমাদের ১২ জন কর্মী…।

এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নিহত এক নেতার নাম উল্লেখ করে ওবায়দুর কাদের বলেন, এগুলো করেছে আক্রমণকারীরা। আজকে অনেকে অনেক কথা বলেন। ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে ১৫ জনকে। এসবের জন্য কারা দায়ী?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবেকের টানে হাসপাতালে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আপনাদের মতো মায়াকান্না করতে নয়, বিবেক ও হৃদয়ের টানে শেখ হাসিনা হাসপাতালে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য যা করতেন, তাঁর কন্যাও সেই সহানুভূতি নিয়ে যাচ্ছেন।

মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু না থাকায় রাজধানীতে ভয়াবহ যানজট হচ্ছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকে ঢাকা সিটিতে অসহনীয় যানজট। কেনো এই যানজট? মেট্রোরেল নেই। যে ধ্বংসলীলা মেট্রোরেলের ১০ নম্বর স্টেশন, কাজীপাড়া স্টেশনে; আজকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা আগুনে কয়লা হয়ে গেছে। উত্তরা থেকে মানুষ আসা–যাওয়া করতে পারছে না। সময়ও বাড়ছে, পরিবহন ব্যয়ও বাড়ছে। এই কষ্ট বহুকালের। শেখ হাসিনাই জনগণের কষ্ট লাঘবে এসব প্রকল্প নিয়েছেন। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের ৩৪টি এসকেলেটর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কেমনে চালু করা হবে? এগুলো তো মানুষের জন্য করা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, জনগণ উপলব্ধি করছেন মেট্রোরেল, এলিভেটেড বন্ধ থাকলে তাঁরা কত কষ্টে থাকেন। এই কষ্টটা সরকার দেয়নি। এটা দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। ক্ষমতার জন্য সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে তারা।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

শার্শার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোতা গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের শার্শা উপজেলার ১০ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের...

আমরা যুদ্ধাবস্থায় আছি: প্রধান উপদেষ্টা

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ষড়যন্ত্রও ততই তীব্র হচ্ছে উল্লেখ...

যশোরে সন্তানকে জিম্মি করে মাকে ধর্ষণচেষ্টা, যুবক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে এক নারীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে হাসান নামের...

নোয়াখালীতে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার কবিরহাটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক...