ঢাকা অফিস: ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্রের নয়জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকা থেকে র্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- দেশব্যাপী ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্র ‘ঢালী সিন্ডিকেট’-এর মূলহোতা মিজান ঢালী ও সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাসসহ চক্রের সদস্য সোহেল ঢালী, সুমন, জাহাঙ্গীর আলম, শাহজালাল হোসেন রাসেল, জয়নাল আবেদীন ও সবুর হাওলাদার।
তাদের মধ্যে শাহজালাল একজন পাঠাও চালক, জাহাঙ্গীর কমলাপুরে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেলের ক্লিনার, রাসেল একই আবাসিক হোটেলের বয় এবং জয়নাল অপর একটি আবাসিক হোটেলের বয়।
তারা তাদের এ সকল কর্মস্থলে কাজের পাশাপাশি সবসময় অবৈধ উপায়ে টিকেট প্রত্যাশী যাত্রী যোগাড় করে কালোবাজারির মাধ্যমে সংগ্রহ করে টিকেটগুলো নির্ধারিত মূল্যের চাইতে প্রায় দুই গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করত। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রেনের টিকেট প্রত্যাশীদের কাছে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে টিকেটগুলো বিক্রি করত।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রেনের বিপুল পরিমাণ টিকেট, আটটি মোবাইল ফোন, একটি এনআইডি, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, কালোবাজারির বিভিন্ন আলামত এবং টিকেট বিক্রির নগদ ১১ হাজার ৪২২ টাকা জব্দ করা হয়।
শুক্রবার (২২ মার্চ) কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
দেশব্যাপী ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি হয় ঢালী সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানের নেতৃত্বে জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে প্রায় সব ধরনের ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিল। মিজান দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের টিকেট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন
তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে তিনি চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিলের কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেন।
পরে রেলওয়ের টিকেট বুকিংয়ে সিএনএস ডট বিডির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকেটের চুক্তি সহজ ডট কমকে দেওয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে।
মিজানের দীর্ঘদিন টিকেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকেট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজারি চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকেট বিক্রি করত।’
বিশেষ করে ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে মিজান ও সোহেল বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিক সংখ্যক টিকেট সংগ্রহ করতে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিজান ও সোহেল প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজডটকমের কর্মচারী ও টিকেট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার রেলওয়ের টিকেট কালোবাজারির মাধ্যমে বিক্রি করতো। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের চাইতেও বেশি সংখ্যক টিকেট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিলো।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘টিকেট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ ভাগ mIR WU Kg ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারম্যানরা পেত এবং বাকি ৫০ ভাগ সিন্ডিকেটের মূলহোতা গ্রেফতার মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি করত। টিকেট বিক্রি করে মাসে ২৫ হাজার টাকা আয় করত তারা। এই অর্থ কখনো তারা নগদ হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিত আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করত। এভাবেই পরস্পরের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিলো।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সহজডটকম টিকেট কালোবাজারির দায় এড়াতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিলো।
স্বাআলো/এস