সম্পাদকীয়: খুলনা, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাটে উপকূলীয় এলাকায় কৃষিজমিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধ ছিদ্র করে অবৈধ পাইপলাইন বসানো হয়েছে। এসব পাইপলাইন দিয়ে নোনা পানি তুলে দেয়া হচ্ছে চিংড়ির ঘেরে। এর প্রভাবে কৃষিজমির লবণাক্ততা বাড়ছে, উর্বরতা কমছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জমিগুলোতে। সেখানকার কৃষিজমি হয়ে পড়ছে অনাবাদি। এর প্রভাবে ফলন কমছে। বাড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের হতাশা। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে এবং সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে উপকূলীয় অঞ্চলের সার্বিকভাবে উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাঙালি জাতির স্মরণীয় দিন ১৭ মার্চ
স্বাধীনতার পর উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমি ছিল আট লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে। অর্থাৎ চার যুগে লবণাক্ত জমি বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আবাদি জমি ২৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চাষযোগ্য ২১ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর। চাষযোগ্য জমির অর্ধেকই লবণাক্ত। প্রতি বছর পাঁচ লাখ হেক্টরের বেশি জমি অনাবাদি থেকে যায়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে। বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি মিশে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানিতেও লবণাক্ততা বাড়ছে। জলোচ্ছাসের সময় সমুদ্রের লোনাপানি এসে জমছে কৃষিজমিতে। এ পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষিজমির স্বাভাবিক উৎপাদনক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা নিতেন তাহলে অনেকাংশে লবণাক্ততা কমতো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে অণুজীব সক্রিয় থাকতে পারছে না। যে কারণে মাটিতে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন ও ফসফরাস কমে যাচ্ছে। বিপরীতে বাড়ছে কপার ও জিংকের মাত্রা। ফলে কৃষকের ধানের ফলন ঠিকমতো হচ্ছে না। লবণাক্ততায় মাটির উর্বরতা কমছে বলে গাছের উৎপাদন ক্ষমতাও কমছে। প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে শুকনো মৌসুমে লবণাক্ত পানির প্রবেশদ্বারে
পর্যাপ্ত সুইসগেট নির্মাণ করতে হবে। সজন পদ্ধতিতে জমি কেটে উঁচু করে চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। লবণাক্ত পানি প্রবেশ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে, লবণাক্ততাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে হবে ও আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষিবিদরা।
আমরা আশা করবো, এসব পরামর্শ আমলে নেয়া হবে।
স্বাআলো/এসআর