তিস্তা নদীর পানির ড্রেঞ্জার লেবেল পরিবর্তন

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: এ বছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদী কাউনিয়া পয়েন্টে বারবার ড্রেঞ্জার লেবেল অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়। ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ছিলো ড্রেঞ্জার লেবেল। যা ২ জুন (মঙ্গলবার) থেকে বাড়িয়ে পুনঃনিধারণ করা হয় ২৯ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর ড্রেঞ্জার লেবেল ৫৬ সেঃমিটার বাড়িয়ে নিধারণ করা হয়েছে।

ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের প্রায় ৬৫ কিঃমিটার উজানে তিস্তা নদীর ওপর ১৯৯২ সালে ডালিয়া বাংলাদেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ চালুর হয়। সেই হতে বর্ষা মৌসুমে প্রতিনিয়ত তিস্তা নদীর ডেঞ্জার লেবেল পরিমাপ করা হয়। এর আগেও ১৯০১ সালের ১৬ অক্টোবর বৃটিশ সরকার কাউনিয়ায় রেলওয়ে সেতু নির্মাণ করে। সেই সময় বৃটিশরা রেলওয়ে সেতুর পিলারে খোদাই করে তিস্তা নদীর ওয়াটার লেবেল স্কেল বসায়। সেখানে ড্রেঞ্জার লেবেল ছিলো। তিস্তা নদী ১৯৯২ সালের আগে কখনো কাউনিয়া রেলসেতু পয়েন্টে ড্রেঞ্জার লেবেল অতিক্রম করতে পারেনি।

উজানের ঢলে আবারো তিস্তার পানি বাড়ছে

লালমনিরহাট রেল বিভাগ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রেলওয়ে সেতু নির্মাণের পর লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সাথে সারা দেশের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো রেলওয়ে। এখানে নদী শাসন করে রেলওয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়ে ছিলো। তাই রেলওয়ে সেতুটির দৈঘ্য ৬৪৩ মিটার।

ভারতের গজলডোবায় ভারত সরকার তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের আগে তিস্তা ছিলো উম্মুক্ত নদী। তিস্তায় গজলডোবায় প্রথম নদী বাধাগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় বাধাগ্রস্ত হয় তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পে বাংলাদেশে। এখন এই নদীর কমপক্ষে ছয়টি স্থানে ভারত সরকার ড্যাম নির্মাণ করে জলবিদ্যুত কেন্দ্র করেছে। তিস্তা নদীর পানি শুস্কমৌসুমে ভারত সরকার প্রত্যাহার করে নিয়ে থাকে। বর্ষায় আবার অতিরিক্ত পানি তিস্তা দিয়ে প্রবাহিত করে বিপদমুক্ত হয়ে থাকে। এই বিপদ মুক্ত হতে গিয়ে তিস্তা হয়ে যায় উম্মাদ। ঝুঁকিতে পরে দেশের তিস্তা সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারেজ।

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত-চীন দুই দেশই প্রস্তাব দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাট সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) ঢাকা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ এসে কাউনিয়া পয়েন্টে নদীর গভীরতা মেপে দেখেছে। সেখানে পলি জমে নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। তাই ড্রেঞ্জার লেবেল ৫৬ সেঃমিটার বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা দেখেছে তিস্তা নদীর পানির স্তর স্কেলে ড্রেঞ্জার লেবেল অতিক্রম করলেও সেখানে নদীর দুই কূল উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকার হাউড্রোলজি বিভাগ তাই মনে করেন। তাই পানি পরিমাপের লেভেল বাড়িয়ে দিয়ে নতুন করে বিপৎসীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে তিস্তা পাড়ের মানুষের দাবি ভিন্ন। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবির সাথে একমত নয়। তারা দাবী করেন, নদী পলিজমে ভরাট হয়ে গেছে। তাই নদীতে উজানের ঢল এলেই লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। পানি নামতে শুরু করলে দেখা দেয় তীব্র নদীভাঙ্গণ।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই বন্যার জন্য সবসময় উজানের ঢল দায়ী থাকে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদীখনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই। তিস্তার ড্রেঞ্জার লেবেল পরিবর্তন করে নদী পাড়ের মানুষ কোন সুফল পাবেনা।

তিস্তায় নৌকাডুবি: শিশুর মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ ৮

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গেল জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ধরা হয় ৪৮৯ মিলিমিটার। কিন্তু বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৩৫ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২৪৬ মিলিমিটার বেশি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ডালিয়ার পরিবর্তে কাউনিয়া পয়েন্টের তিস্তা নদীর পানি কেন বারবার বিপৎসীমা অতিক্রম করছিলো। বিষয়টি হাইড্রোলজি বিভাগে জানানো হয়েছিলো। তারা নতুন করে বিপৎসীমা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছে।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

মাহমুদউল্লাহ-ফাহিমের ঝড়ে দুর্দান্ত জয় বরিশালের

টার্গেটে ১৯৮ রান। বড় লক্ষ্য ব্যাট করতে নেমে ৫১...

চুয়াডাঙ্গায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ইসলামপাড়ার পানিতে ডুবে আরবী খাতুন (৫)...

আতশবাজি-ফানুস উৎসব নিয়ে যে বার্তা দিলেন জয়া আহসান

কতশত স্মৃতি নিয়ে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২৪। নতুন বছর ২০২৫’...

শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আজ থেকে তিনদিন সারাদেশে দিন ও...