অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রধান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন গুম কমিশন। বুধবার (৪ জুন) বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিবেদন হাতে পেয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘটনাগুলোকে ‘ভয়াবহ’ এবং ‘গা শিউরে ওঠার মতো’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “কী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা! আমাদের সমাজের ভদ্রলোকেরা, আমাদেরই আত্মীয়-পরিজনরা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।” তিনি আরও মন্তব্য করেন, যা কিছু পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে একটি ‘হরর মিউজিয়াম’ হওয়া উচিত।
ড. ইউনূস বলেন, এই ধরনের বন্দিশালা কেমন হয়, তিন ফিট বাই তিন ফিট খুপড়ির মধ্যে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আটকে থাকার যে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিত।
তিনি নির্দেশ দেন যে, এই প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের পাশাপাশি বই আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, এটি ঘিরে শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিকভাবেও আগ্রহ রয়েছে।
কমিশন সদস্যদের ভয়-ভীতি, নানান রকম হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে কাজের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য আপনারা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। ভবিষ্যতে যারা মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবেন, আপনারা তাদের অনুপ্রেরণা।
বিএনপিকে যমুনায় ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা কমিশন সদস্যদের কাছে প্রতিবেদনের আলোকে আশু করণীয়গুলো চিহ্নিত করে কোনটি কোন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ছে, তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন। এর ফলে সরকার স্বল্পসময়ের মধ্যে কাজগুলো শুরু করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে একজন কমিশন সদস্য জানান, গুমের ঘটনাগুলো এতটাই ভয়াবহ যে এতে জড়িত অনেক কর্মকর্তা ও অন্যরাও অনুশোচনায় ভোগেন এবং আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা হিসেবে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, দুজন অফিসার লিখিতভাবে এর থেকে পরিত্রাণ চেয়ে চিঠিও লিখেছিলেন, যা গণভবনে পাওয়া গেছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জনসম্মুখে এই চিঠির কথা স্বীকারও করেছেন।
কমিশন সদস্যরা আরো জানান, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে এবং এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, মোট অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে এখনও তিনশতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলেও কমিশন জানায়।
কমিশন প্রধান প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান যে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যাতে অন্তত ব্যাংক হিসেবে লেনদেন করতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি জানান, বিদ্যমান আইনে কেউ সাত বছর নিখোঁজ থাকলে তাকে মৃত বলে ধরে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কমিশন আইন সংশোধন করে এটিকে পাঁচ বছর করার সুপারিশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা অতিদ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য করণীয় জানাতে কমিশনকে পরামর্শ দেন।
প্রতিবেদন জমাকালে অন্যান্যের মধ্যে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, গুম কমিশন সদস্যনূর খান, সাজ্জাদ হোসেন এবং নাবিলা ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন।
স্বাআলো/এস