আগামী কয়েকদিন সারাদেশে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
টানা তাপপ্রবাহের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় জনজীবনে স্বস্তি আসলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০০ জন বজ্রপাতে মারা যায়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মারা যায় বছরে গড়ে ২০ জনেরও কম। বাংলাদেশে গাছপালা কেটে ফেলা, বিশেষ করে খোলা মাঠে উঁচু গাছ ধ্বংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে থাকে।
ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের ৭০ ভাগই কৃষক বা যারা খোলা মাঠে কাজ করেন। এছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়।
বজ্রপাতের সময় করণীয় ও সতর্কতা নিয়ে যা বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর:
চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাটসহ পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে নিহত ৭
১. বজ্রপাতের সময় খোলা বা উঁচু জায়গায় না থেকে পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিতে হবে এবং উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকতে হবে। এ সময় জানালা থেকে দূরে থাকা এবং খালি পায়ে না থাকা উচিত।
২. বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি। তাই বজ্রঝড়ের সময় গাছ বা খুঁটির কাছাকাছি থাকা নিরাপদ নয়। ফাঁকা জায়গায় থাকা কোনো যাত্রী ছাউনি বা বড় গাছে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
৩.বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা ঠিক হবে না। এমনকি ল্যান্ডফোন ব্যবহার না করতেও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বজ্রপাতের সময় এগুলোর সংস্পর্শ এসে অনেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
চুয়াডাঙ্গায় বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু
৪. বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত যন্ত্রপাতি এড়িয়ে চলা উচিত। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও স্পর্শ করা উচিত না। বজ্রপাতের আভাস পেলে আগেই বৈদুতিক যন্ত্রপাতির বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে রাখা ভালো।
৫. বজ্রপাতের সময় রাস্তায় গাড়িতে থাকলে সম্ভব হলে দ্রুত বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করতে হবে। যদি তখন প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়, তাহলে গাড়ি কোনো বারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে রাখা যেতে পারে। ওই সময় গাড়ির কাচে হাত দেয়াও বিপজ্জনক হতে পারে।
৬. বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমতে পারে। অনেক সময় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে সেই পানিতে পড়ে হতে পারে দুর্ঘটনার কারণ। কাছে কোথাও বাজ পড়লেও জমে থাকা পানি হয়ে উঠতে পারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কারণ।
৭. বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। যদি একান্ত বের হতেই হয়, পা ঢাকা জুতো ব্যবহার করা ভালো। রাবারের গামবুট এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে।
৮. বজ্রপাতের সময় রাস্তায় চলাচলে খেয়াল রাখতে হবে। কেউ আহত হয়ে থাকলে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট কাউকে ঘটনার সময় খালি হাতে স্পর্শ করলে নিজেও ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে।
স্বাআলো/এস