আজাদুল হক, বাগেরহাট: বাগেরহাটে পৃথক ঘটনায় স্ত্রীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুক নিয়ন্ত্রণ আইনে আদালতে দায়ের করা মামলায় মোংলা বন্দরের হারবার বিভাগের ওয়ারলেস অপারেটর (বেতার বার্তা) শাহীনুল ইসলামকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আর আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা স্বত্তেও ডিউটি করছেন বাগেরহাট পুলিশ অফিসের ডিএসবির এসআই মোস্তাফিজুর রহমান। তাকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
মামলা ও ঘটনা সুত্রে প্রকাশ, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাতে মোংলা পৌর শহরের মার্কেট এলাকা থেকে শাহীনুল ইসলামকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। মামলার অভিযোগ শাহীনুল ইসলাম বিয়ের সময় যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে। এরপর মোটরসাইকেল কেনার জন্য পুণরায় টাকা চেয়ে না পেয়ে স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করতো স্বামী শাহীনুল ইসলাম। সেই নির্যাতন সইতে না পেরে স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা বাদী হয়ে মোংলা থানায় মামলা করেণ। এই মামলার প্রধান আসামি হলেন স্বামী শাহীনুল ইসলাম। ২০২২ সালের প্রথম দিকে পৌর শহরের সিঙ্গাপুর মার্কেটের ব্যবসায়ী তোফায়েল আহাম্মেদের মেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরার সাথে বিয়ে হয় বন্দর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহেরের ছেলে শহীনুল ইসলামের সাথে। বিয়ের পর ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর শাহীনুল ইসলাম ব্যবসায়ী শ্বশুর তোফায়েল আহমেদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নেয়। সেই টাকা না দিয়ে কিছুদিন পর মোটরসাইকেল কিনবে বলে তার স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরার মাধ্যমে আরো সাড়ে তিন লাখ টাকা যৌতুক চায় সে। স্ত্রী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই রাতে দেড় বছরের মেয়েসহ তাকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ঘর থেকে বের করে দেয় শশুর বাড়ির লোকজন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ নির্য়াতনের সহযোগিতা করেন শাহীনুল ইসলামের মা আনোয়ারা বেগম (৫৩), ছোট বোন শারমিন আক্তার (১৯), শামীমা নাসরিন আক্তার ঝুমুর (৩৫) ও তার জামাই আনোয়ারুল আজিমসহ (৪৩) কয়েকজন। পরে পাঁচজনকে আসামি করে মোংলা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন শাহীনুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা। এই মামলায় মঙ্গলবার রাতে শাহীনুল ইসলাম শহরে আসলে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বাগেরহাটে সড়কে ঝরলো মোটরসাইকেল আরোহীর প্রাণ
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় শাহীনুলকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার সাইফুর রহমান ভূইয়া বলেন, ওয়ারলেস অপারেটর শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে এবং সে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে শুনেছি। যেহেতু গ্রেফতার হয়ে জেল জাহতে গেছে, এখন তার বিরুদ্ধে বন্দরের বিধি মোতাবেক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাগেরহাট পুলিশ অফিসের ডিএসবির এসআই মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তার প্রথম স্ত্রী নাহিদা আক্তার মনির দায়ের করা ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারার মামলায় আদালত কতৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। আবার সে আদালতে আত্মসমর্পনও করছে না। বহাল তবিয়্যতে তিনি ডিউটি করছেন। এ অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী নাহিদা আক্তার মনি।
বাগেরহাটের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা, মামলা দায়ের
তিনি বলেন, অতিরিক্ত অর্থের মোহে আমার কাছে দফায় দফায় যৌতুকের টাকা চেয়ে না পেয়ে এসআই মোস্তাফিজ অপর এক পুলিশের স্ত্রী মমতাজ বেগমকে বিবাহ করে। মমতাজ বেগম ও পুলিশে কর্মরত। দফায় দফায় যৌতুক দাবি ও আমার অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ করায় উপায়ন্তর না পেয়ে আমি বাদী হয়ে স্বামী মোস্তাফিজ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ বেগম আসামি করে আদালতে মামলা করেছি। আদালত এ মামলায় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও তাকে এখানের পুলিশ গ্রেফতার করছে না। এমন কি সে আদালতের হাজির হয়ে জামিন ও নেয়নি।
স্বাআলো/এস