নিজস্ব প্রতিবেদক: চার মাসেও যশোরে খুলনার ইঞ্জিনিয়ার বায়েজিদের প্রধান খুনি বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁদ ও তার ভাই সঞ্জয় চৌধুরীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার এজাহারভুক্ত ৯ আসামির মধ্যে মুল্লুক চাঁদ এবং তার ভাই সঞ্জয় চৌধুরীকে আটক করতে না পারলে ন্যায় বিচার নিয়ে সংসয়ে রয়েছে নিহতের পরিবার।
জানা গেছে, খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার বায়েজিদ হাসান নামে এক ইঞ্জিনিয়ার যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী রওফে মুল্লুক চাঁদের ঢাকাস্থ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নির্মিত বিল্ডিংয়ের কাজ করতেন। পাঁচ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে মুল্লুক চাঁদ ও তার ভাই সঞ্জয় চৌধুরী বিভিন্ন সময় বায়েজিদকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তারই অংশ হিসেবে গত ২৪ মার্চ রাতে খুলনার মোটর শ্রমিক নেতা বিপ্লবের মাধ্যমে বায়েজিদকে ধরে যশোরে নিয়ে আসা হয়। ওই রাতেই মুল্লুক চাঁদ ও সঞ্জয়ের উপস্থিতিতে বায়েজিদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
যশোরে বিএনপি নেতার চালের আড়তে যুবক খুন, আটক ১
এই ঘটনায় নিহতের মা দিলরুবা বেগম যশোর কোতোয়ালী থানায় সঞ্জয়-মুল্লুক চাঁদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ ২৬ মার্চ হাফিজুর রহমান খোকাকে গ্রেফতার করে। ২৭ মার্চ আদালতে হাজির করা হলে খোকা এই হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। এসময় তাদের সহযোগী অন্য সকলের নাম প্রকাশ করেন। এরপরই তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্য আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজখবর নেয় র্যাব যশোর ক্যাম্পের সদস্যরা। এরই মধ্যে আসামি আব্দুর রহমান রাজন ও রাজু আহম্মেদ রাজুর অবস্থান জানতে যশোরের র্যাব এবং ঢাকা উত্তরা র্যাবের যৌথ অভিযানে তাদের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের যশোর কোতোয়ালী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এরপরে আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। তিনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে অপর আসামি শহিদুল ইসলাম জানান, ইঞ্জিনিয়ার বায়েজিদের কাছে পাওনা সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা না দিয়ে আত্মগোপন করেছে। এরপর তারা দুইজন ইঞ্জিনিয়ার বায়েজিদকে খুঁজতে খুলনায় যান। বায়েজিদকে পেয়ে তারা স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে কাউন্সিলর টিপুর মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে শহিদুল পাওনাদার যশোরের মুল্লুক চাঁদকে জানায়। মুল্লুক চাঁদ তাকে যশোর ধরে নিয়ে আসতে বলেন। যশোরে আনার পরে মুল্লূক চাঁদের হুকুমে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান।
যশোরে বিএনপি নেতার চালের আড়ৎ থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার
নিহতের শাশুড়ি কেয়া বেগম ও স্ত্রী তাকিয়া এবং ভাই আব্দুল আহাদ বলেছেন, ঘটনার দিন বিকেলে সঞ্জয় চৌধরী একটি প্রাইভেটকারে করে খুলনা থেকে বায়োজিদকে যশোরে নিয়ে আসেন। তারা কেশবপুরে ইফাতারিও করেন। পরে সন্ধ্যার দিকে চালের আড়তে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
মামলার বাদী দিলরুবা বেগম বলেছেন, ঘটনার চার মাস হলেও বায়েজিদ হত্যার প্রধান আসামি মুল্লুক চাঁদ ও তার ভাই সঞ্জয় চৌধুরীকে এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ। ফলে মামলার ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংসয়ে রয়েছি।
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই শরীফ আল-মামুন বলেছেন, এজাহারভুক্ত ৯ জনের মধ্যে সাতজনকে আটক করা হয়েছে। সঞ্জয় চৌধুরী আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু মুল্লুক চাঁদকে আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েরেছ।
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বায়োজীদ হত্যার ঘটনায় নিহতের মা দিলরুবা ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এখনো পর্যন্ত সাত আসামি আটক এবং সঞ্জয় চৌধুরী আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে মূল আসামি মুল্লুক চাঁদ এখনো পলাতক রয়েছে। তাকে আটকের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
স্বাআলো/এস