ঢাকা অফিস: খাদ্য বিভাগের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি অংশ অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
অসাধু কর্মকর্তারা এ উপায়ে লাভবান হলেও খাদ্যদ্রব্যের বাজার অস্থিরতায় বিপাকে পড়ছে সরকার, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পকেট কেটে রাতারাতি ধনিক বণিকে পরিনত হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক একদিন পর থেকে হঠাৎ করে চালের দাম প্রকারভেদে কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দেশে হইচই পড়ে যায়। মন্ত্রিসভার শপথের আগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা এ দুষ্কর্ম করে। দায়িত্বভার গ্রহণ করেই খাদ্যমন্ত্রী ও সচিব মিলমালিকদের (মিলারদের) খাদ্য অধিদফতরে ডেকে পাঠান। ভরা মৌসুমে চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চান। কিন্তু চালকল মালিকরা কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে না পারায় চারদিনের সময় বেঁধে দিয়ে তাদের কাছ থেকে চালের দাম কমানোর ওয়াদা আদায় করেন। কিন্তু ওয়াদা অনুযায়ী বাজারে চালের দাম না কমায় খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে যথাক্রমে বাজার তদারকি টিম ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।
রমজানে পণ্যের শুল্ক কমানোর সুবিধায় আরো বেপরোয়া ব্যবসায়ীরা
এতে চালের বাজার অস্থিরতা তৈরির সঙ্গে জড়িতদের আসল চেহারা ধরা পড়ে খাদ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে। সে কারণেই ২৯ ফেব্রুয়ারি আরসি ফুড এবং ডিসি ফুডদের ডেকে তাদের অধিক্ষেত্রে যেসব সমস্যা ধরা পড়েছে তা তাদের সামনে তুলে ধরে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। আগামী দিনে যাতে অতীতে করা ভুল ও অপকর্ম না করে সে বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হবে। তারপরও যদি কেউ আগের মতোই অপকর্মে জড়ান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর পরবর্তী ধাপে ডাকা হবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও পরিদর্শকদের।
কারণ খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তাদের অতীত কর্মরেকর্ড সন্তোষজনক নয়। তারা সততা ও আন্তরিকতা সঙ্গে পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে দায়িত্ব পালন না করলে শুধু পরিপত্র দিয়ে খাদ্য মজুতদারি, বাজারের স্থিতিশীলতা এবং স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে না। সরকারি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে মাঠের কর্মকর্তাদের এবার একান্তভাবে ঢাকায় ডাকছেন খাদ্যমন্ত্রী।
প্রাথমিকভাবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাদের (আরসি-ফুড) এবং জেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের (ডিসি-ফুড) নিয়ে খাদ্য ভবনে বৈঠক করবেন খাদ্যমন্ত্রী ও সচিব। এরপর পৃথকভাবে ডাকা হবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (টিসিএফ) এবং খাদ্য পরিদর্শকদের। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
রমজানের আগেই বাড়ছে বিদ্যুতের দাম
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, তাদের মাঠের সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য ডাকা হচ্ছে। আগে মিটিং হতে দিন। মিটিংয়ের পরই জানানো হবে কেনো মিটিং ডাকা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শস্যের মজুতদারির সঙ্গে খাদ্য বিভাগের মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাদের নিবিড় সহায়তা ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও খাদ্যমন্ত্রীর দৌড়ঝাঁপ কিছুতেই তারা দুষ্কর্ম থেকে সংশোধন হচ্ছে না। তারা এক ব্যবসায়ীর নামে একাধিক ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ইস্যু করেন। কোন লাইসেন্সের অনুকূলে কোন গুদামে কী পরিমাণ ধান-চাল মজুত রেখেছে তা সঠিকভাবে দেখভাল করেন না। নিয়ম মেনে প্রতিটি গুদাম ও মিলের বিপরীতে যে পরিমাণ ধান-চাল মজুত করা হলো তা সঠিক আছে কি না তা পরখ করে দেখেন না। আবার দেখা গেছে কাগজেপত্রে ধান ও চালের যে পরিমাণ উল্লেখ আছে বাস্তবে তার চেয়ে বেশি মজুত করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব চিত্র ধরা পড়েছে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্য বিভাগের অভিযানে।
স্বাআলো/এস