আন্তর্জাতিক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অপহরণ চক্রের সদস্য এক বাংলাদেশিকে ধরিয়ে দিতে ২০ হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।
অভিযুক্ত ওই বাংলাদেশির নাম রুহেল চৌধুরী।
তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে দুইজনকে অপহরণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন এবং মুক্তিপণের জন্য হুমকি দেয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর কুইন্সের রাস্তা থেকে দুইজনকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত সাতজন সন্দেহভাজনের মধ্যে ৩৪ বছর বয়সী রুহেল চৌধুরী হচ্ছে শেষ ব্যক্তি। এছাড়া ৩৪ বছর বয়সী এই বাংলাদেশিকে ধরিয়ে দিতে গত ১ মার্চ এফবিআই একটি পোস্টারও প্রকাশ করে।
এফবিআইয়ের তথ্য অনুসারে, ৩৪ বছর বয়সী আবু চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ২৪ বছর বয়সী ইফফাত লুবনাসহ আরও ছয়জন ষড়যন্ত্রকারীকে গত বছর এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফেডারেল প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, গত বছরের ২৭ মার্চ জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ের কাছে ১৮১তম সেন্ট থেকে অপহরণকারীরা প্রথম এক ব্যক্তিকে তুলে নেয়। রুহেল চৌধুরী ব্যবহৃত গাড়ির ব্যবসা করেন এবং তার সরবরাহ করা একটি হোন্ডা এসইউভিতে জোর করে ভুক্তভোগীকে তুলে নেন আবু চৌধুরী।
পরে আবু চৌধুরী ভুক্তভোগীকে গাড়ির মধ্যে মারধর করেন এবং রুহেল চৌধুরী এসময় নিজেই ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বলেও জানিয়েছেন প্রসিকিউটররা।
এমনকি আবু চৌধুরী তার সেলফোনে ভিডিও রেকর্ড করায় ভিকটিমকে একপর্যায়ে রাস্তায় নগ্ন হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছিল বলেও ফেডারেল প্রসিকিউটররা বলেছেন। প্রসিকিউটররা বলছেন, সন্দেহভাজন সৈয়দ রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আনজু খান এবং সুলতানা রাজিয়াকে সঙ্গে নিয়ে রুহেল চৌধুরী সারারাত ভিকটিমকে মারধর করার পাশাপাশি হুমকিও দেন।
অপহরণকারীরা পরে ভিকটিমকে সেডেটিভের ডোজ দিয়ে পানি পান করায় এবং পরের দিন হাসপাতালে ঘুম থেকে ওঠার আগ পর্যন্ত তাকে অজ্ঞান করে রাখে বলেও অভিযোগ করেন প্রসিকিউটররা।
এফবিআই জানায়, অভিযুক্ত লুবনা গত বছরের ১১ মে কুইন্সের উডসাইডে একটি রেস্তোরাঁয় দ্বিতীয় এক ভুক্তভোগীকে ডেকে আনে। ফেডারেল তদন্তকারীরা বলছেন, সেখানে লুবনার স্বামী লোকটিকে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং তাকে একটি মিনিভ্যানে জোর করে নিয়ে যায়। এই গাড়িটিও রুহেল চৌধুরী সরবরাহ করেছিলেন এবং তিনি নিজেই সেটি চালাচ্ছিলেন।
পরে রুহেল চৌধুরী ভিকটিমকে একটি হোটেলে নিয়ে গেলে তার সহযোগীরা ভিকটিমকে মারধর করে। এছাড়া হোটেলে আবু চৌধুরী ওই ব্যক্তিকে যৌন হয়রানি করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন প্রসিকিউটররা।
অপহরণের এক পর্যায়ে আবু চৌধুরী ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে ২০ হাজার মার্কিন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে। তদন্তকারীর অভিযোগ, ফোন কলের সময় আবু চৌধুরী টেলিফোনের মাধ্যমে তার চিৎকার যেন শোনা যায় তা নিশ্চিত করতে ভিকটিমকে প্রচণ্ড মারধর করেন।
প্রসিকিউটররা বলছেন, এরপরও বাবা তার ছেলের মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করেন।
এছাড়া অপহরণকারীরা ওই ভিকটিমকে এমন ওষুধ খেতে বাধ্য করেছিলো যা তিন দিনের নির্যাতন সহ্য করার পরও তাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে রেখেছিল বলে প্রসিকিউটররা বলেছেন। একপর্যায়ে লোকটি কোনো মতে একটি জানালা ভেঙে পালাতে সক্ষম হন এবং এরপর কাছাকাছি থাকা বাসিন্দাদের ৯১১ নম্বরে কল করার অনুরোধ করেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম কথিত অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন আবু চৌধুরী ও ইফফাত লুবনা।
আরএফবিআইয়ের নোটিশে রুহেল চৌধুরীকে বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করে কুইন্সের হলিস, কুইন্স ভিলেজ এবং জ্যামাইকা এলাকায় তার যাতায়াত রয়েছে বলে জানানো হয়। তার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, ওজন ১৫০ পাউন্ড এবং চোখের রঙ বাদামী বলেও জানানো হয়েছে।
কেউ তাকে দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্থানীয় এফবিআই অফিস বা নিকটস্থ আমেরিকান দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।
স্বাআলো/এস