আন্তর্জাতিক

বিয়ে প্রতারক সুন্দরীকে ধরতে পুলিশের জাল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | May 21, 2025

‘ডাকাত কনে’ নামেই পরিচিত অনুরাধা পাসওয়ান। বিয়ের ফাঁদে ফেলে অন্তত ২৫ জন পুরুষের কাছ থেকে লাখ লাখ রুপি ও গয়না হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে চালানো এই প্রতারণার চক্রের অবশেষে অবসান ঘটিয়েছে রাজস্থান পুলিশ। অভিনব কৌশলে সাজানো ফাঁদে পড়ে সম্প্রতি তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

৩২ বছর বয়সী এই নারী নিজেকে বারবার নতুন নাম, পরিচয় ও শহরের ছদ্মবেশে উপস্থাপন করে পুরুষদের প্রেম ও বিয়ের প্রলোভনে ফেলতেন। ‘পাশের বাড়ির সুন্দরী গরিব কনে’ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। বলতেন, বিয়ে করতে চান, কিন্তু পরিবার গরিব—বেকার ভাইয়ের দায়িত্ব নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে।

চক্রের অন্যান্য সদস্যরা ঘটক সেজে হবু বরদের কাছে তাঁর ছবি ও সাজানো জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপন করতেন। একেক বিয়ের জন্য তারা দুই লাখ রুপি পর্যন্ত দাবি করতেন। পরে মন্দির বা বাড়িতে রীতিনীতি মেনে বিয়ে সম্পন্ন হতো।

এরপর শুরু হতো অনুরাধার অভিনয়। আদর্শ স্ত্রী ও মায়াবতী পুত্রবধূর ভূমিকায় পরিবারের সবার আস্থা অর্জন করতেন। কিছুদিনের মধ্যেই ঘুমের ওষুধ বা চেতনানাশক খাইয়ে পরিবারের সদস্যদের অচেতন করে তিনি নগদ অর্থ, গয়না ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতেন।

রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুর জেলার বাসিন্দা বিষ্ণু শর্মা এই প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের একজন। গত ২০ এপ্রিল তিনি অনুরাধার সঙ্গে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই অনুরাধা শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রায় সোয়া লাখ রুপির গয়না, ৩০ হাজার নগদ টাকা ও ৩০ হাজার রুপির একটি ধার করা মুঠোফোন নিয়ে চম্পট দেন। বিষ্ণু শর্মা বলেন, ‘আমি ফেরি করে পণ্য বিক্রি করি, ঋণ নিয়ে বিয়ে করেছি। এমন প্রতারণা কল্পনাও করিনি।’

ঘটনার তদন্তে নেমে রাজস্থান পুলিশ একটি ফাঁদ পাতে। পুলিশের এক কনস্টেবল বর সেজে অনুরাধার চক্রের দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চক্রের সদস্যরা তাঁকে নারীদের ছবি ও বিয়ের প্রস্তাব দেন। এরপর অনুরাধাকে বিয়ের প্রলোভনে ভোপালে ডেকে নিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

তদন্তে জানা গেছে, অনুরাধার সব পরিচয় ও কাগজপত্র ভুয়া। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে এবং প্রতারিত ব্যক্তিদের তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “অনুরাধা পাসওয়ান একটি সংঘবদ্ধ চক্রের প্রধান। আমরা চক্রটির অন্য সদস্যদেরও শনাক্তে কাজ করছি।”

এই ঘটনা ভারতের সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ অনুরাধার অভিনয় দক্ষতায় হতবাক। তবে পুলিশি তৎপরতায় চক্রটির মুখোশ উন্মোচন হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।

Shadhin Alo