পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম কোরবানি। কোরবানি দাতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়ন করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন। সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করার সময় এর বিভিন্ন মাসায়েল বা নিয়ম জানা জরুরি। এর মধ্যে অন্যতম হলো এক পশুতে কতজন শরিক হতে পারবে এবং এর জন্য কী কী শর্ত প্রযোজ্য।
ইসলামি বিধান অনুযায়ী, সামর্থ্য থাকলে একাই একটি পশু কোরবানি করা উত্তম। তবে কোরবানির জন্য নির্ধারিত পশুগুলোর মধ্যে গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত ভাগে কোরবানি করা বৈধ। অর্থাৎ সাতজন ব্যক্তি মিলে এসব পশুর একটি কোরবানি দিলেই যথেষ্ট হবে। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘গাভি ও উট সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে।’ (আবু দাউদ: ২৭৯৯) সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকেও বিষয়টি প্রমাণিত।
হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে হজ করেছিলাম, তখন আমরা সাতজন করে একটি উট এবং একটি গরুতে শরিক হয়ে কোরবানি করেছি। (সহিহ মুসলিম, হা. ১৩১৮)
তবে শরিকি কোরবানির ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত অবশ্যই পালনীয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, অংশ নেয়া সবার নিয়ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হতে হবে। যদি কোনো অংশীদার কেবল মাংস খাওয়ার নিয়তে বিনিয়োগ করে অথবা কোনো অমুসলিম ব্যক্তি অংশ নেয়, তাহলে সেই কোরবানি সহিহ হবে না এবং কোনো শরিকেরই কোরবানি আদায় হবে না।
অন্যদিকে, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কোরবানি দিতে পারবে। এগুলো দ্বারা একাধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করা সহিহ হবে না। উট, গরু ও মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। সাতের অধিক শরিক হলে কারো কোরবানি সহিহ হবে না। তবে সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করাও জায়েজ। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭০, কাযিখান ৩/৩৪৯, হিন্দিয়া ৫/৩০৪)
শরিকি কোরবানিতে কারো অংশ এক-সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যদি কারো অংশ এর চেয়ে কম হয়, তাহলে কোনো শরিকেরই কোরবানি সহিহ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭১)
কেউ যদি গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেয়ার নিয়তে কিনে আনে এবং সে ধনী হয় (যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব), তাহলে তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরিক করা জায়েজ হলেও শরিক না করে একা কোরবানি করাই উত্তম। যদি শরিক করে, তাহলে ওই অংশের টাকা সদকা করে দেওয়া শ্রেয়। আর যদি ওই ব্যক্তি গরিব হয় (যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়), তাহলে যেহেতু কোরবানির নিয়তে পশুটি ক্রয় করার মাধ্যমে লোকটি তার পুরোটাই আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তাই তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরিক করা জায়েজ নয়। যদি শরিক করে তবে ওই টাকা সদকা করে দেওয়া জরুরি। গরিব ব্যক্তি কোরবানির পশুতে কাউকে শরিক করতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়্যাত করে নিতে হবে। (হেদায়া ৪/৪৪৩, কাযিখান ৩/৩৫০-৩৫১)
শরিকি কোরবানির পর গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ওজন করে বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নেই। (আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযিখান ৩/৩৫১)
পবিত্র ঈদুল আজহার আগে কোরবানির পশুর শরিক সংক্রান্ত এসব নিয়ম জানা থাকলে সঠিকভাবে কোরবানি আদায় করা সম্ভব হবে বলে জানান ইসলামিক চিন্তাবিদরা।
স্বাআলো/এস