ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান টানা হামলা-পাল্টা হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশ উভয় পক্ষকে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে সংঘাতের বিস্তার এবং তীব্র উত্তেজনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের আশপাশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জর্ডানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়া নিউজ জানিয়েছে, এই রণতরী আগামী সপ্তাহে ইউরোপীয় জলসীমার উদ্দেশে রওনা দেবে। এটি হবে মধ্যপ্রাচ্যের আশপাশে মোতায়েন তৃতীয় মার্কিন ক্যারিয়ার।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড ২৪ জুন সকালে ভার্জিনিয়ার নরফোক বন্দর থেকে যাত্রা করবে। যদিও এটিকে পূর্বনির্ধারিত মোতায়েন বলা হচ্ছে, তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের আবহে এটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও দুই সপ্তাহ সময় নেবেন। শুক্রবার নিউ জার্সিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ইসরায়েল যেহেতু জয়ের পথে রয়েছে, তাই তাদের হামলা থামাতে বলা সহজ নয়। ইরান তুলনায় কম সফল। আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি, তবে কী হয় তা দেখা যাক।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত যুক্রতয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, দখলদার ইসরায়েলের হামলা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না তেহরান। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, “ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হলে এবং আগ্রাসনকারীদের আন্তর্জাতিক বিচারের আওতায় আনা হলে কেবল তখনই ইরান কূটনৈতিক সমাধান বিবেচনা করবে।”
তিনি আরও জানান, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে এবং এই কর্মসূচির ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ইরান আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বর্তমানে ইউএসএস কার্ল ভিনসন মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন রয়েছে এবং ইয়েমেনে হুতিদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হামলায় যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন ঘাঁটিতে সামরিক পরিবহন বিমান পাঠিয়েছে এবং কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটি থেকে বিমান সরিয়ে নিয়েছে সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায়।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে একটি বড় ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।