ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের ট্রাম্প প্রশাসনের জোরালো দাবি সত্ত্বেও পেন্টাগনের সর্বশেষ মূল্যায়ন ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ইরানকে হয়তো কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে, কিন্তু দেশটির পারমাণবিক কার্যক্রম ধ্বংস করা যায়নি।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক বি-টু স্টিলথ বোমারু বিমান থেকে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এই বোমাগুলো ৬০ ফুট কংক্রিট বা ২০০ ফুট মাটি ভেদ করে বিস্ফোরিত হতে সক্ষম। লক্ষ্য করা হয়েছিল ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোকে।
হামলার পরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন দাবি করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” হয়েছে। জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন সাংবাদিকদের বলেন, তিনটি কেন্দ্রে “চরম ক্ষয়ক্ষতি” হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার একযোগে ধ্বংস করা হয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি: আসলেই শেষ নাকি ‘বড় যুদ্ধ’ আসন্ন?
কিন্তু হামলার তিন দিন পর পেন্টাগনের প্রতিবেদনে ভিন্ন চিত্র উঠে আসে। এতে বলা হয়- ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ধ্বংস হয়নি। প্রধান সেন্ট্রিফিউজগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি মূলত স্থলভাগের অবকাঠামোতে সীমাবদ্ধ। ভূগর্ভস্থ মূল স্থাপনাগুলো অনেকটাই অক্ষত আছে। দুটি স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে, কিছু স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা সূত্র সিবিএস নিউজকে জানিয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে সর্বোচ্চ কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে, এর বেশি নয়।”
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইরান হামলার আগেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল। স্যাটেলাইট চিত্রে প্রবেশপথে গর্ত ও ধ্বংসস্তূপ দেখা গেলেও ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিশ্চিত করা যায়নি।
পেন্টাগনের এই মূল্যায়ন প্রকাশের পর হোয়াইট হাউস তা নাকচ করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এই ধরনের প্রতিবেদন তাঁর প্রশাসনের সাফল্য হেয় করার প্রচেষ্টা। ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, “সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমস মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। এটি সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অভিযানকে খাটো করার চেষ্টা।”
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে উল্লেখ করে তদন্তের দাবি তুলেছেন।
পরমাণু অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট বলেন, “এই হামলায় ইরানের ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু পুনর্গঠনে তারা সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করবে। আর তারা এখন মার্কিন ও ইসরায়েলি নজরদারিতে রয়েছে।”
ইসরায়েলি একটি সূত্র সৌদি সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছে, ইরানের ইউরেনিয়ামের বড় অংশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তবে ইরান বলছে, হামলার সময়ই স্থাপনাগুলো খালি করে দেওয়া হয়েছিল, তাই বড় ক্ষতি হয়নি।
হামলার জবাবে ইরান কাতারের আল-উদেইদ ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যদিও তা প্রতিহত হয় এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরে ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানান, যা পরে কার্যকর হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি ইরান পুনর্গঠন শুরু করে, তাহলে আরও বড় সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
স্বাআলো/এস