আজ বাজেট ঘোষণা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আদায়ই মূল চ্যালেঞ্জ

আজ সোমবার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই বাজেট উপস্থাপন করবেন, যা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি সহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশনে একযোগে প্রচার করা হবে।
বাজেট এলেই সাধারণ মানুষের প্রধান চিন্তা থাকে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে কিনা। অর্থ উপদেষ্টা তাঁর বাজেট বক্তব্যে মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করাই হবে তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সরকারের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ধীরগতি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে রাজস্ব সংগ্রহ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার উদ্বেগ হয়তো বেশিই থাকবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে ছিল এবং পরবর্তী চার মাস এটি ৯ শতাংশের ঘরে ছিল। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ সময় ধরে ১০ শতাংশের বেশি থাকায় সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতির গড় হার সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ambitious লক্ষ্যমাত্রা বাজেটে নির্ধারণ করা হচ্ছে।
আসছে বাজেটে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় কাটছাঁট
অর্থ বিভাগের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গবেষণা সংস্থা মূল্যস্ফীতিকেই দেশের অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমলে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে এক নম্বর অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়া হলেও আগামী অর্থবছরে সাধারণ করদাতাদের আয়করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। উল্টো কিছু পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পদক্ষেপ এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তত ৬২৬টি পণ্যে আমদানি শুল্কে ব্যাপক ছাড় দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং প্রায় ৫০০ পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকছে। আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার এই সম্ভাব্য ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার আয়কর এবং ভ্যাটের ওপর বাড়তি নজর দিচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে আয়কর খাতে রাজস্ব বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় মূলত ভ্যাটের ওপর চাপ বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি ব্যয় সংকোচন করা হচ্ছে এবং মুদ্রানীতিও সংকোচনমূলক থাকবে। বাজেটে নিত্যপণ্যের বিষয়ে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেয়া হবে।
মাগুরা পৌরসভার ৮৩ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শুধু সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, কারণ এটি বিনিয়োগকেও বাধাগ্রস্ত করে। তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বস্তি পেত এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার ছিল। নতুন বাজেটের গুণগত পরিবর্তন নিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী নন বলে জানান।
রাজস্ব বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএমএফ ঋণের শর্ত এবং দেশের নিজস্ব কারণে এটি অপরিহার্য। আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে আছে। অধ্যাপক সেলিম রায়হান আরও বলেন, কর কাঠানো সংস্কার সহ বিভিন্ন কমিটির অনেক সুপারিশ বাজেটে প্রতিফলিত হচ্ছে না এবং এনবিআরকে দুই ভাগ করার উদ্যোগও স্থবির হয়ে আছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হলে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংক্ষেপে, অন্তর্বর্তী সরকারের এই বাজেট একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, তেমনি রাজস্ব আয়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সরকারের জন্য বড় পরীক্ষার হবে। একই সাথে করদাতা ও সাধারণ মানুষের ওপর ভ্যাটের সম্ভাব্য চাপ মূল্যস্ফীতির উদ্বেগ আরো বাড়াতে পারে।
স্বাআলো/এস