ভারতের রাজধানী দিল্লির রোহিনীতে জন্মদিনের উপহারকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া পারিবারিক কলহের জেরে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রী ও শাশুড়িকে হত্যা করেছেন। এই ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
রবিবার (৩১ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এই তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, দিল্লির রোহিনীতে পারিবারিক বিরোধের জেরে স্ত্রী প্রিয়া সেহগাল (৩৪) ও শাশুড়ি কুসুম সিনহা (৬৩)-কে হত্যার অভিযোগে যোগেশ সেহগাল (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, তাদের ছেলের জন্মদিনে দুই পরিবারের মধ্যে উপহার দেওয়া-নেওয়া নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত হয়, যা শেষ পর্যন্ত এই রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে মেঘ সিনহা (৩০) নামের এক ব্যক্তি কেএনকে মার্গ থানায় ফোন করে তার মা ও বোনের নিহত হওয়ার বিষয়ে জরুরি তথ্য দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রোহিনীর সেক্টর-১৭ এলাকার একটি ঘরের ভেতর কুসুম সিনহা ও তার মেয়ে প্রিয়া সেহগালের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
মেঘ সিনহা পুলিশকে জানান, গত ২৮ আগস্ট তার মা কুসুম নাতি চিরাগের জন্মদিন উপলক্ষে মেয়ের বাসায় গিয়েছিলেন। ওই সময় প্রিয়া ও তার স্বামী যোগেশের মধ্যে উপহার নিয়ে তর্ক শুরু হয়। বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য কুসুম মেয়ের বাড়িতেই থেকে যান।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ আগস্ট মেঘ তার মায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে কোনো সাড়া পাননি। পরে তিনি বোনের বাসায় গিয়ে দেখেন দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ এবং দরজার কাছে রক্তের দাগ লেগে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের খবর দেন এবং তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখনই ঘরের ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় মা ও বোনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মেঘ অভিযোগ করেন, বেকার স্বামী যোগেশ সেহগাল তার স্ত্রী প্রিয়া ও শাশুড়ি কুসুমকে হত্যা করে সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত যোগেশকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা পোশাক এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সন্দেহজনক একটি কাঁচি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ পারিবারিক কলহকেই এই হত্যাকাণ্ডের কারণ বলে মনে করছে।
ঘটনার তদন্তে ক্রাইম টিম ও ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (এফএসএল) বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গেছেন।
প্রিয়ার ভাই হিমালয় পিটিআইকে বলেন, “আমার মা আগের দিন বোনের বাড়ি গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, পরদিন ফিরবেন। ফোনে কথা হলে জানিয়েছিলেন, বোন আর জামাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। তিনি সেটা মিটমাট করে ফিরবেন। কিন্তু আর ফেরেননি। পরদিন সকাল থেকে ফোন করেও কোনো সাড়া পাইনি। ভেবেছিলাম হয়তো ঘুমাচ্ছেন। দুপুরের দিকে যখন বাড়িতে যাই, তখন দরজার তালায় রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ হয়। তালা ভেঙে ঢুকে দেখি মা আর বোন রক্তে ভেসে পড়ে আছেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে সেখানে পৌঁছাই। আমার দুলাভাই তাদের খুন করে বাচ্চাদের নিয়ে পালিয়েছে। কে এমনটা করতে পারে? দাম্পত্য জীবনে সবারই ঝগড়া হয়, কিন্তু ১৭ বছরের সংসার ভেঙে স্ত্রী ও শাশুড়িকে খুন করা— এটা অকল্পনীয়, অমানবিক।”
স্বাআলো/এস