চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা উদ্বোধন

চৌগাছায় (যশোর) প্রতিনিধি: ‘খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রক্ষায়’ যশোর জেলার চৌগাছায় ৩য় খেজুর গুড়ের মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম মেলার উদ্বোধন করেন।

‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’ ‘স্বাদে সেরা গন্ধে ভরা, খেজুর গুড়ে মনোহরা’ এ ঐতিহ্য ধারন করে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় গাছিদের নিয়ে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত উপজেলা চত্ত্বরে তিনদিনব্যাপী এই গুড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি শেলী।

বিশেষ অতিথি থাকবেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার।

২০২৩ সালের ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি উপজেলায় দেশের প্রথমবারের মতো খেজুর গুড়ের মেলা আয়োজন করে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন।

প্রতি বছরের মতো এবারের মেলায়ও খেজুরগুড় নিয়ে বিশেষ গম্ভীরার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এবার মেলার ২য় দিন বৃহস্পতিবার রয়েছে গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠিখেলার বিশেষ আয়োজন।

মেলার প্রথম দিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২০৪ জন গাছি তাদের উৎপাদিত ঝোল গুড়, দানা গুড়, পাটালী, বাদাম পাটালি, তিলে পাটালি নিয়ে অংশ নেন। এছাড়া স্কাউটস সদস্যদের উদ্যোগে মেলার মাঠে রস জ¦ালিয়ে গুড় তৈরি করা ছাড়াও নারী উদ্যোক্তারা গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পিঠার স্টল দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন আশা করছে মেলা থেকে তিনদিনে ৫০০ থেকে ৬০০ মন গুড় বিক্রি করতে পারবেন গাছিরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, যশোরের জিআই পণ্য খেজুর রসের গুড় জাতীয় অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠতে পারে। খেজুর গাছ প্রস্তত থেকে শুরু করে রস সংগ্রহ ও গুড় পাটালি তৈরির কাজে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা গেলে কাজটি আরো সহজ হবে। গাছ প্রস্তুত থেকে গুড় তৈরি পর্যন্ত যে ধাপগুলো রয়েছে তা যশোরের ঐতিহ্যবাহি প্রসিদ্ধ একটি শিল্প। যশোরের জিআই পণ্যের এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষার বিকল্প নেই। গাছের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উপজেলার সকল রাস্তা, নদীর ধার ও খাস জমিতে খেজুর গাছ রোপনের প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রতিবছর খেজুর গাছের চারা রোপন করা হচ্ছে। এই চারাগুলো রক্ষানাবেক্ষণের দায়িত্ব এই উপজেলার মানুষের।

তিনি আরো বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারলে এই পেশা কষ্টসাধ্য থাকবেনা। গাছ প্রস্তুত ও রস সংগ্রহের কাজ সহজ হলে চাষীরা এই এই পেশা থেকে সরে যাবেন না বরং অন্যরা আগ্রহী হবেন। খাঁটি গুড় তৈরি করতে পারলে দেশ বিদেশে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে যারা এই পেশায় জড়িত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে বৈশাখী মঞ্চে অনুষ্ঠিত গুড় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুষ্মিতা সাহা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিন জাহান, যশোরের সহকারী কমিশনার আব্দুল আহাদ, চৌগাছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান, চৌগাছা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামাল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির মাওলানা গোলাম মোরশেদ, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন।

এসময় উপজেলার বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১১ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংবাদকর্মী, রাজনীতিবিদ, স্থানীয় গণ্যমান্যসহ গাছিরা উপস্থিত ছিলেন।

মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিলো রস জ্বালানোর পাত্র তাপাল থেকে খেঁজুর গাছের পাতা দিয়ে গরম গরম গুড় খাওয়া। এ গুড় খেতে গিয়ে আগত দর্শনাথীরা নস্টালজিয়ায় ডুবে যান। গুড় খেতে খেতে অনেকে বলেন, সেই শৈশবে আর কৈশরের দিনগুলিতে জালই (মাটির তৈরী পাত্র) আর তাপাল (টিনের তৈরী পাত্র) থেকে খেঁজুর পাতা দিয়ে গরম গরম গুড় খেয়েছি আর এখন চৌগাছার গুড়মেলায় এসে গরম গুড়ের স্বাদ নিতে পারছি।

মেলায় ৯৩ কেজি গুড় নিয়ে আসেন হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর গ্রামের গাছি আব্দুল কুদ্দুস। আব্দুল কুদ্দুসের রয়েছে ৫০৩টি খেজুর গাছ।

তিনি বলেন, ৩টি মেলায়ই আমি অংশগ্রহণ করেছি। মেলার তিনদিনে অন্তত ৬ মণ (২৪০ কেজি) গুড় বিক্রির আশা করছি।

এছাড়া মেলায় গত বছরের শ্রেষ্ঠ গাছি পুরুস্কার পাওয়া আব্দুল গাজী এসেছেন।

তিনি বলেন, আমি ৯০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। এ দিয়েই আমার সারা বছরের সংসার চলে যায়। তিনি আশা করছেন এবছরেও তিনি শ্রেষ্ঠ গাছি হবেন।

মেলায় আসা উদ্যেক্তা আতাউর রহমান বলেন, আমাদের চৌগাছা তথা যশোরের গুড়ের সারা দেশের সাথে বহির্বিশ্বেও চাহিদা বেশি। এজন্য আমাদের এখানকার গুড়ের দামও বেশি। তিনি বলেন খেজুর গুড়ের মেলা শুরু হওয়ার পর এই চাহিদা আরও বেড়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, উপজেলায় রস উৎপাদনের মতো খেজুর গাছ রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। যা থেকে উপজেলার প্রায় ১৪০০ গাছি রস উৎপাদন করে থাকেন।

দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে চৌগাছার খেজুর গুড়ের স্বাদ বেশি হওয়ায় এর চাহিদা বেশি বলেও তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, মেলার তিন দিনে গাছিরা ৫০০ থেকে ৬০০ মন গুড় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছি। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন সব সময়ই গাছিদের পাশে ছিলো আগামীতেও থাকবে।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

বৃষ্টির নিখোঁজের চারদিন পর লাশ মিললো বাগেরহাটে

জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল: নিখোঁজের চারদিন পর বাগেরহাট থেকে নড়াইল...

পাসপোর্টে থাকছে না পুলিশ ভেরিফিকেশন

পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে থাকছে না পুলিশ ভেরিফিকেশন।মঙ্গলবার...

খুলনায় গৃহবধু ও বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

খুলনার খালিশপুর থানা এলাকায় মারিয়া সুলতানা নামের এক গৃহবধূ...

জানুয়ারিতে সড়কে ঝরেছে ৬০৮ প্রাণ

বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২১টি।...