বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তে কম্পোজিট বিওপি (আধুনিক কম্পোজিট বর্ডার আউটপোস্ট) নির্মাণ করবে ভারত।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এই পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ভারত সরকার ৫০৯টি কম্পোজিট বিওপি (ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর) নির্মাণের ব্যাপারে অনুমোদন করেছে। ৫০৯টি কম্পোজিট বিওপির মধ্যে ৩৮৩টি কম্পোজিট বিওপি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নির্মাণ করা হবে। বাকি ১২৬টি বিপিও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নির্মিত হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সীমান্তে কম্পোজিট বিওপি নির্মাণের জন্য এর মধ্যেই সম্মতি জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সীমান্ত নাশকতা, অনুপ্রবেশ, আন্তর্জাতিক সীমান্ত লঙ্ঘন বা দখলের কার্যকলাপ রোধে ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ৫০৯টি নতুন আধুনিক কম্পোজিট বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) নির্মাণ করতে চলেছে ভারত সরকার। একটি কম্পোজিট বিওপিতে সৈনিকদের থাকার জন্য কমপক্ষে একটি ব্যারাক, একটি রান্নাঘর, একটি ডাইনিং হল, একটি গ্যারেজ, একটি জেনারেটর রুম, একটি টয়লেট ব্লক, একটি প্রশাসনিক ব্লক, একটি ওয়্যারলেস রুম, একটি অস্ত্রাগার এবং যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ছয়টি সিমেন্টের বাঙ্কার ও চিকিৎসা পরিষেবা থাকবে।
জানা যায়, ৪ হাজার ৯৬.৭ কিলোমিটার বিস্তৃত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এবং ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার বিস্তৃত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রহরারত বিএসএফ সৈন্যদের জন্য এই কম্পোজিট বিওপি খুবই সহায়ক হবে। বিওপি এলাকায় আবাসন নির্মাণ, লজিস্টিক সহায়তা এবং আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াতে পরিকাঠামো প্রদান করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, এই কম্পোজিট বিওপি নির্মাণ একদিকে যেমন বিএসএফের সদস্যদের ভাল কাজের পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাহিনীর আধিপত্যকে শক্তিশালী করবে। কারণ সুযোগ-সুবিধা এবং অবকাঠামোর দিক থেকে একটি সাধারণ বিওপির থেকে কম্পোজিট বিওপি সম্পূর্ণ আলাদা। আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিএসএফের প্রধান ওয়ার্কস্টেশনই হলো এই বিওপিগুলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ৪ হাজার ৯৬.৭ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত রয়েছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ (২ হাজার ২১৬.৭ কিমি), ত্রিপুরা (৮৫৬ কিমি), মেঘালয় (৪৪৩ কিমি), মিজোরাম (৩১৮ কিমি) এবং আসাম (২৬৩ কিমি) স্পর্শ করেছে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল এবং ঘন জঙ্গল ও নদীতে ঘেরা এই বিস্তীর্ণ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মাদক পাচারসহ একাধিক সীমান্ত নাশকতার অভিযোগ আছে। এই সীমান্ত এলাকায় বর্তমানে ১ হাজার ৯৬টি বিওপি রয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে মোট ৭৩৬টি বিওপি স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়, এর মধ্যে ৬৭৫টি বিওপি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ৩১টি বিওপির কাজ চলমান রয়েছে, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি ৩০টি বিওপির জন্য বিকল্প স্থান অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ৩ হাজার ৩৩২ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তটি রয়েছে গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে। এসব সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা এবং অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং মাদক চোরাচালানের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
স্বাআলো/এসএ