ঢাকা অফিস: দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা শেষে ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর দরজায় কড়া নাড়ছে। ঈদের ছুটিতে ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঢেলে সাজানো হয়েছে। ফাঁকা ঢাকায় যেন ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মতো ঘটনা না ঘটে সেজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপির পক্ষ থেকে স্পেশাল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। অন্যদিকে রেড জোন চিহ্নিত করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে র্যাব।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, অন্য ঈদের ছুটির মতো এবারো রাজধানী ছেড়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। এর ফলে ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা থাকবে। এ সুযোগে প্রতি বছরই অপরাধীদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। তাদের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয় ফাঁকা ঢাকার ফ্ল্যাট বাসা ও রাস্তার পথচারীরা। তাই এবারের ঈদের ছুটিতে যেন এসব অপরাধ না ঘটে, সেজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আগামী বুধবার (১০ এপ্রিল) থেকে ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে। সাপ্তাহিক ও ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের ছুটি মিলিয়ে এবার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লম্বা ছুটি মিলছে। তাই ঈদ উদযাপনের জন্য দলে দলে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আলাদা আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব ও পুলিশ। রমজানজুড়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যেতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে নতুন করে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ছাড়া ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। অতীতের ঘটনা মাথায় রেখে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নতুন করে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, বিগত পাঁচ বছরে রাজধানীতে এক হাজারের মতো ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। অন্যদিকে চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে কয়েক হাজার। ডিএমপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০২৩ সালে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৯৯টি, চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে এক হাজার ৫১১টি। ২০২২ সালে ছিনতাই মামলা ৩১০টি এবং চুরির মামলা এক হাজার ৬০৩টি। ২০২১ সালে ছিনতাই মামলা হয় ১৬৬টি এবং চুরি সংক্রান্ত মামলা এক হাজার ৩৪৩টি। ২০২০ সালে ছিনতাই মামলা ১৭৬টি এবং চুরির মামলা এক হাজার ২১৭টি। এ ছাড়া ছিনতাই ও চুরির অনেক ঘটনার মামলা না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধ দমনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে ডিএমপির স্পেশাল টিম। ডিএমপির স্পেশাল টিম এলাকায় এলাকায় ঘুরে টহল দেবে এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় সন্দেহজনক কারো চলাফেরা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ঈদের ছুটির সময় কাজ করে যাবে এই স্পেশাল টিম। এ ছাড়া ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে ডিএমপির ৫০টি থানাকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনা।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। মোবাইল টহল টিমের পাশাপাশি চেকপোস্ট জোরদার করা হবে। ফাঁকা ঢাকায় যেকোনো অপরাধ দমনে মাঠ পর্যায়ে থাকবে স্পেশাল টিম। এ ছাড়া বিশেষ নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ডিএমপির প্রতিটি থানাকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাবও। গোয়েন্দা দল, চেকপোস্ট, রোবাস্ট পেট্রোল ও টহল টিমের পাশাপাশি কিছু এলাকার জন্য স্পেশাল টিম ইতোমধ্যে প্রস্তুত রেখেছে র্যাব। এ ছাড়া রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকাকে অপরাধের জন্য রেড জোন চিহ্নিত করে এসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে র্যাব।
সোমবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদে ঢাকা শহরের অনেক বাসিন্দা গ্রামে চলে যান। শূন্য ঢাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের ওপর বর্তায়। শূন্য ঢাকার নিরাপত্তা দিতে আমরা আমাদের পাট্রোল বৃদ্ধি করি। কোনো এলাকায় যদি কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় তা আমরা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পারি আর তখন আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকাকে আমরা রেড জোন হিসেবে দেখছি। যেখানে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেশি ঘটে। এসব রেড জোনে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি।
এদিকে রবিবার (৭ এপ্রিল) সায়দাবাদ জনপথ মোড়ে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়ি যাবেন। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা বাড়িতে কেউ যাতে অপরাধ সংঘটিত করতে না পারে সেজন্য আপনারা ফ্ল্যাট বাড়ির নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিয়োজিত করবেন। অনেক সময় দেখা যায়, অপরাধ সংঘটিত হলে সিসিটিভির ক্যামেরা অন্য দিকে মুখ করে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক আছে কি না এবং যেদিকে মুখ করে থাকার কথা সেদিকে আছে কি না তা আপনারা চেক করে নেবেন। যাতে করে অপরাধ সংঘটিত হলে পাহারাদার না ধরতে পারলেও আমরা যেন গিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারি।
ছিনতাই নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ঈদের সময় ছিনতাইকারীরা যেমন তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করে তেমনি আমরাও আমাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছি। ছিনতাই নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিটি ছিনতাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ছিনতাইকারীদের আমরা আইনের আওতায় আনছি। অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
স্বাআলো/এস