আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মানবসৃষ্ট নির্গমন ও দাবানলের মতো অন্যান্য উৎস থেকে ছড়িয়ে পড়া দূষণে বিশ্বজুড়ে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির (এনটিইউ) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (১০ জুন) প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, এল নিনো এবং ভারত মহাসাগরের ডাইপোলের মতো আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাতাসে দূষণের ঘনত্বকে তীব্র করে তুলছে। এর ফলে দূষণকারী অন্যান্য উপাদানের ওপর এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে।
ঢাকার বায়ু দূষণের মান অস্বাস্থ্যকর
গবেষকরা বলেছেন, বস্তুকণা পিএম-২.৫ এর ক্ষুদ্র কণাগুলো শ্বাসের সাথে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এই বস্তুকণা রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করার মতো যথেষ্ট ছোট হওয়ায় তা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বস্তুকণা পিএম-২.৫ হলো বাতাসে থাকা সব ধরনের কঠিন এবং তরল কণার সমষ্টি, যার বেশিরভাগই বিপজ্জনক। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন— প্রাণঘাতী ক্যানসার ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে পিএম-২.৫। এ ছাড়া বায়ু দূষণকারী আরেক পদার্থ এনও-২ প্রধানত পুরোনো যানবাহন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প স্থাপনা, আবাসিক এলাকায় রান্না, তাপদাহ এবং জ্বালানি পোড়ানোর কারণে তৈরি হয়।
ডব্লিউএইচও বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন বলছে, পিএম২.৫ নামে পরিচিত ছোট এবং বিপজ্জনক বায়ুকণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে এরচেয়েও কম ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অনেক শহরের বাতাসে এসব কণার মারাত্মক উপস্থিতি রয়েছে।
বায়ু দূষণ নিয়ে সুরক্ষামূলক পরামর্শ দিচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর
এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল সাময়িকীতে প্রকাশিত সমীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, ১৯৮০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যুর সঙ্গে ওই সূক্ষ্ম কণার সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক ও ক্যানসারসহ যেসব রোগের বা অবস্থার চিকিৎসা আছে কিংবা প্রতিরোধ করা যেতে পারে, সেসব রোগে আক্রান্তরা মানুষের গড় আয়ুর চেয়ে কম বয়সে মারা যাচ্ছেন। আবহাওয়ার এসব বৈরী ধরন ১৪ শতাংশ মৃত্যু বাড়িয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
বায়ুদূষণের তালিকায় আজ ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়
এনটিইউ বলেছে, দূষণ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ওই সময়ের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এশিয়ায়। ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এশিয়ায় এসব ঘটনায় ৯ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের অকাল মৃত্যুতে ভূমিকা রেখেছে পিএম-২.৫ দূষণ; যাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন চীন এবং ভারতে। এ ছাড়া বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং জাপানেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এই চার দেশে একই সময়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণে প্রত্যেক বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টির বায়ুর গুণমান ও জলবায়ুর ওপর চালানো এই গবেষণাকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তৃত ও বৃহৎ পরিসরের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এই গবেষণায় এনটিইউয়ের গবেষকরা স্বাস্থ্যের ওপর বস্তুকণা-২.৫ এর বিশাল প্রভাবের চিত্র হাজির করতে প্রায় ৪০ বছরের ডেটা ব্যবহার করেছেন। এনটিইউয়ের এশিয়ান স্কুল অব দ্য এনভায়রনমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক স্টিভ ইম এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন যে, বায়ু দূষণকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে আমাদের গবেষণার ফলাফলে সেই চিত্র উঠে এসেছে।
বায়ুদূষণে শীর্ষে আছে লাহোর, আজ ঢাকার স্থান তৃতীয়
স্টিভ ইম বলেন, এল নিনোর মতো জলবায়ুর নির্দিষ্ট কিছু ঘটনায় দূষণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যার অর্থ পিএম-২.৫ দূষণের কারণে মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটতে পারে। বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বায়ু দূষণ মোকাবিলা করার সময় জলবায়ুর এসব বৈশিষ্ট্য বোঝার ও এই বিষয়ে হিসেব-নিকেশ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে আমাদের এই গবেষণা।
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির এই গবেষণায় হংকং, যুক্তরাজ্য ও চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণে প্রত্যেক বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
স্বাআলো/এস