আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের হত্যা করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) আজ সোমবার (২৭ মে) এ অভিযোগ দায়েরের কথা জানায়। অভিযোগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তের আহবান জানানো হয়েছে।
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে
আরএসএফ বলেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কমপক্ষে ৯জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের শিকার হওয়ার অভিযোগ তদন্তে তারা আইসিসিতে আবেদন করেছে।
এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আইসিসিতে এ ধরনের অভিযোগ দায়ের করল আরএসএফ। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর ও ২২ ডিসেম্বর আইসিসিতে দুইটি অভিযোগ করেছিলো সংগঠনটি।
সর্বশেষ অভিযোগে সুনির্দিষ্টভাবে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০ মে পর্যন্ত আটজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা এবং একজনকে আহত করার বিষয়টি উল্লেখ করে আরএসএফ। এক বিবৃতিতে আরএসএফ বলেছে, এই সাংবাদিকদের সবাই নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় হতাহত হয়েছেন।
`গাজায় সবচেয়ে বড় গণহত্যা হয়েছে’
গত জানুয়ারিতে আইসিসি বলেছিলো, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সম্ভাব্য অপরাধের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। চলমান এ সংঘাতে ১০০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আরএসএফ বলছে, এই সাংবাদিকদের কাউকে কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করা হয়েছে। অন্যরা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো ইচ্ছাকৃত হামলার শিকার হয়েছেন বলে তাদের মনে করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
গাজায় নৃশংস হামলা, গর্ভবতী নারী-শিশুসহ নিহত ১৮
আরএসএফের পরিচালক আন্তোইন বার্নার্ড বলেছেন, যারা সাংবাদিকদের হত্যা করছে, তারা মূলত জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকারের ওপরই আক্রমণ করছে। সংঘাতের সময়ে এ অধিকার (তথ্য পাওয়া) আরো বেশি প্রয়োজনীয়।
আরএসএফের দায়ের করা অভিযোগে জানুয়ারিতে নিহত আল-জাজিরার দুইজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন হামজা ওয়ায়েল দাহদোহ ও মুস্তাফা থুরিয়া। গাজা উপত্যকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তাঁরা নিহত হন বলে জানিয়েছিলো আল–জাজিরা।
গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। একই সঙ্গে ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামলার ঘটনায় হামাসের তিন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করেন তিনি। অবশ্য আইসিসির বিচারক প্যানেল এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১২১ ফিলিস্তিনি
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) বলেছে, চলমান গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০৭ জন সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। ১৯৯২ সাল থেকে সিপিজের তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে এটি হলো সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী সময়।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাসসহ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের যোদ্ধারা। এতে প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এছাড়া প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।
এরপর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গত ৭ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাংবাদিকদের পাশাপাশি জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর দেড় শতাধিক কর্মী নিহত হয়েছেন।
স্বাআলো/এস