রবিউল হক
ঢাকার মেট্রোরেল স্বপ্নের এক যাতায়াত ব্যবস্থা। দৈনিক চার লাখেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করে এই প্রকল্প নগরীর গর্বের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখাচ্ছে, এই গর্বের আড়ালে লুকিয়ে আছে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা। ২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার। একটি ছোট কারিগরি ত্রুটির কারণে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ থাকে এক ঘণ্টা ৪৯ মিনিটের জন্য। অথচ এ সমস্যা মাত্র ১০ মিনিটেই সমাধান করা সম্ভব ছিল। সমস্যার চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায় অব্যবস্থাপনা আর দায়িত্বে অবহেলা, যার মাশুল দিতে হয়েছে হাজার হাজার যাত্রীকে।
এই পুরো সময়ে যাত্রীদের কোনো তথ্য জানানো হয়নি। স্টেশনগুলোর মাইকে শুধু চলাচল বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও কখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে, সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। অনেক যাত্রী স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছেন, কেউ কেউ রোদে পুড়েছেন স্টেশনের বাইরে। কারও জানার উপায় ছিলো না, কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এটি শুধু গাফিলতি নয়, এটি নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ব অস্বীকারের স্পষ্ট উদাহরণ।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর মত প্রতিষ্ঠান, যার কাঁধে একটি পূর্ণাঙ্গ নগর পরিবহন ব্যবস্থার দায়িত্ব, তাদের কাছ থেকে এই ধরনের দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ থাকলেও, সেখানেও কোনো আপডেট ছিলো না। সর্বশেষ ফেসবুক পোস্ট ছিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে স্টেশন বন্ধ থাকার ঘোষণা। প্রশ্ন হলো, যখন হাজার হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েন, তখন ডিএমটিসিএল কী করছিলো?
এখানে মূল সমস্যা শুধু কারিগরি ত্রুটি নয়। সমস্যা হলো দুর্বল জরুরি পরিকল্পনা, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, সংকট মোকাবিলায় দ্রুততার অভাব এবং সর্বোপরি যাত্রীসেবাকে অগ্রাধিকার না দেওয়ার মানসিকতা। একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার অন্তরে থাকা উচিত মানবিকতা ও পেশাদারিত্ব কেবল প্রযুক্তি বা অবকাঠামো নয়।
করণীয় কী?
জরুরি তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা: স্টেশন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রিয়েল-টাইম আপডেট চালু করা জরুরি।
দ্রুত সাড়া দেয়ার দল গঠন: কারিগরি সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত তা সমাধানের জন্য প্রশিক্ষিত টিম থাকতে হবে।
কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা: দায়িত্বে অবহেলার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: যাত্রীদের মতামত ও অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
শেষ কথা
মেট্রোরেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন শুধু উন্নত অবকাঠামো নয়, উন্নত ব্যবস্থাপনাও। দায়িত্বহীনতার মাশুল যেন আর ভবিষ্যতে যাত্রীদের না দিতে হয়। নাগরিক সেবায় পেশাদারিত্ব, সতর্কতা ও মানবিকতার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে, উন্নয়নের সমস্ত সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে। তাই সময় থাকতে ডিএমটিসিএল-কে সঠিক পথে ফিরতে হবে। দায়িত্বহীনতার বদলে দায়িত্বশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে তা না হলে, মেট্রোরেলের প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে, আর তার চরম মূল্য দিতে হবে সমগ্র নগরবাসীকে।
লেখক: সংবাদকর্মী
স্বাআলো/এস