দেড় মাসেও যশোরের ছাত্রলীগকর্মী রাকিবুল ইসলাম ইমন হত্যার রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের আটক করা সম্ভব হয়নি। এদিকে খুনিদের বাড়িতে ‘আতশবাজি ফুঁটিয়ে বোমা হামলার’ অভিযোগে রাকিব হত্যা মামলার স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করছে আসামিরা। সে কারণে রাকিবের হত্যা রহস্য উদঘাটন এবং খুনিদের আটক না করায় মামলাটির ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও এখন সংশয়ে রয়েছে তার পরিবার।
তবে আসামি আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাচান।
উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে রাকিবুল ইসলাম ইমনকে।
নিহত ইমন একই উপজেলার শাহাবাটি গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের নিমতলী গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের পোষ্য ক্যাডাররা বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। যে কারণে এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে তাদের ওই সকল অপকর্মের প্রতিবাদ শুরু করে। এতে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের ইন্দনে ও মদদে তার সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। রাকিবুল ইসলাম ইমনসহ তার কয়েক বন্ধু গত ১০ সেপ্টেম্বর নিমতলী টেকের বাজার এলাকার ইমরান হোসেনের বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেন ইসতিয়াক আহম্মেদ অপু, ইমরান হোসেন, শহিদুল ইসলাম,আলমগীর হোসেন বটু ও মোহাম্মদ আলী ক্লে। কিন্তু বাজারে আসা মাত্রই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চেয়ারম্যান লুৎফরেরর পোষ্য ক্যাডার মোস্তাক হোসেন, আব্দুস সামাদ ধাবক, হাফিজুর রহমান, আফজাল হোসেন, বাবলু বিশ্বাস, ফারুক হোসেন, নুরে আলম সিদ্দিকী পলাশ, রবিউল ইসলাম শাহের খান, ইকরাম হোসেন, ইসমাইল গাজী, মোহাম্মদ গাজী, দেয়াপাড়ার টিটোসহ কয়েকজনে তাদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলায় রাকিবুল ইসলাম ইমনসহ কয়েকজনে আহত হন। কয়েকজনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ইমনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমন মারা যান।
এ ঘটনায় ইমনের পিতা শাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় শাহের খান ও ফারুক হোসেন ছাড়া আর কেউ গত দেড় মাসেও আটক হয়নি। পাশাপাশি হত্যার কারণ উদঘাটনও করা হয়নি। ফলে এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও সংশয়ে রয়েছে নিহতের পরিবার।
এদিকে ইমনের খুনিরা নিজেদের বাড়িতে বাজি ফুঁটিয়ে বোমা মারার অভিযোগ তোলা এবং এই মামলার স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই অভিযোগে ইমন হত্যা মামলার স্বাক্ষীদেরও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
এই ব্যাপারে নিহত রাকিবের পিতা শাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, আসামিরা মাঝেমধ্যে এলাকায় এলেও তাদের আটক করা হচ্ছে না। আবার মামলাটি স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করা হচ্ছে। ফলে ইমন হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হাচান জানিয়েছেন, দুইজন আসামি আটক করা হয়েছে। অন্যদেরও আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
স্বাআলো/এসএ