নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে যশোর-বেনাপোল সড়কের দুই পাশের শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও ডালপালা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে যশোর জেলা পরিষদ। দীর্ঘদিন ধরে এই গাছগুলো সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সোমবার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে গাছগুলো অপসারণের এই নির্দেশ দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন নাভারণ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকনুজ্জামান রিপন।
যশোর-বেনাপোল সড়কের ধারে থাকা অনেক শতবর্ষী গাছ মরে গিয়ে বা ডালপালা শুকিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রায়শই এসব গাছের অংশবিশেষ ভেঙে পথচারী বা যানবাহনের উপর পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি একটি চলন্ত ট্রাকের সামনে গাছের বড় একটি ডাল ভেঙে পড়লে ট্রাকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চালক ও হেলপার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
যশোরে নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত হওয়ায় যশোর-বেনাপোল সড়কের এই গাছগুলো কাটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছিল। গাছ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে, এমনকি গাছ না কাটার পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করা হয়েছিল। এই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় এতদিন চূড়ান্ত কোনো সমাধান আসছিল না। তবে, ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে অবশেষে জেলা পরিষদ ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও ডালপালা অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর সড়ক বিভাগের অধীন যশোর-বেনাপোল (এন-৭০৬) একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। সড়কের উভয় পাশে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু শতবর্ষী মরাগাছ ও ঝুঁকিপূর্ণ ডাল-পালা রয়েছে। প্রায়ই শতবর্ষী গাছের ডালপালা ভেঙে পথচারী নিহত, আহত ও যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে।
পত্রে আরো বলা হয়, চলতি বর্ষা মৌসুমে ঝড় ও বৃষ্টিপাতের ফলে যেকোনো সময় এসব মরাগাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা ভেঙে যে কোন দুর্ঘটনায় জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা পরিষদকে উক্ত মরাগাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা অপসরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনেকবার বলা হলেও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। বর্তমানে জীবনহানির ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
যশোরে নিজ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, স্বামী-সতীন পলাতক
নির্দেশনা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উক্ত মরাগাছ ও ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা কেটে বা অপসারণ করে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো চত্বরে সংরক্ষণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান জানান, মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছ বা ডাল অপসারণের জন্য নিয়মিত ফোন পেলেও সড়কটি হাইওয়ে বিভাগের এবং গাছগুলো জেলা পরিষদের হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের সরাসরি কিছু করার সুযোগ ছিল না। তবে জনস্বার্থে তিনি জেলা পরিষদকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, শার্শা উপজেলা অংশের বেনাপোল থেকে নাভারণ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে নয়টি মৃত গাছ এবং ৯৪টি গাছের ডালপালা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ইউএনও ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান জেলা পরিষদের পত্র পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এই অপসারণের কাজগুলো সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেয়া হবে।
স্বাআলো/এস