ঢাকা অফিস: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশে এই মুহূর্তে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে এবং অশুভ শক্তি দেশের স্বপ্ন ও ঐক্য নস্যাৎ করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীকে সর্বোচ্চ সজাগ থেকে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি। অশুভ শক্তি আমাদের স্বপ্ন ও ঐক্য ভেঙে দিতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে চেষ্টা করছে। একে প্রতিহত করতে পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বিগত ১৫ বছরের শাসনামলের সমালোচনা করে বলেন, বিগত ১৫ বছর পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছিল। অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী জনরোষের শিকার হয়েছে, যার কারণে অনেক সৎ অফিসারকেও মাশুল দিতে হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, স্বৈরাচার পতনের পর পুলিশ বাহিনী প্রায় ভেঙে পড়েছিলো, তবে অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশকে উজ্জীবিত করতে এবং তাদের কাজের জন্য সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, “বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে, পুলিশ এই স্বপ্ন পূরণের মূল শক্তি।” তিনি পুলিশ ও জনগণের মধ্যে বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলে সৃষ্ট দূরত্ব কমিয়ে আস্থা পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দেন। “আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা, মানুষ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলা, যাতে মানুষ পুলিশকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে,” যোগ করেন তিনি।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন যেনো সুষ্ঠু হয়, সেজন্য পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণের পাশাপাশি ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব।
ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনীকে যাতে আর দলীয় বা অন্যায় কাজে ব্যবহার করা না যায়, সেজন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। তিনি নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়কে ‘কঠিন’ উল্লেখ করে পরাজিত শক্তির অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখতে পুলিশকে বিশেষভাবে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুলিশকে সর্বোচ্চ সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। তিনি সব স্তরের মানুষের অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে ন্যায্যতার ভিত্তিতে একটি বৈষম্যমুক্ত ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্নের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগ যেন আমরা না হারাই। এবার ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে চিরজীবনের জন্য দায়ী থাকবো।
স্বাআলো/এস