আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে নতুন করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, যা সাম্প্রতিক পেহেলগাম হামলার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুল্লা ও আখনূর সেক্টরে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর প্রকাশ করেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৮-২৯ এপ্রিল রাতের মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিনা উসকানিতে এলওসি বরাবর ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ভারতীয় সেনারা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে “সংযত ও কার্যকরভাবে” এর জবাব দিয়েছে। গোলাগুলিতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে, ভারতীয় গণমাধ্যম গোলাগুলির জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা দেশটির সংবাদমাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
এই গোলাগুলির ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে এক হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ওই হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করেছে এবং বিতর্কিত সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।
হামলার পরিকল্পনা ভারতের, জবাব দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান
অন্যদিকে, পাকিস্তানও ভারতের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া, ইসলামাবাদ ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে এবং সব ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের পদক্ষেপকে ‘প্রায় যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং যেকোনো মূল্যে দেশের পানির অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আরও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, উত্তেজনা বাড়ানো হলে ভারতকে তার বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করা হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পেহেলগাম হামলার ঘটনায় প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের ‘রক্ত ফুটছে’ উল্লেখ করে হামলায় জড়িতদের ‘কঠিনতম শাস্তি’ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভারত-পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে ফের গোলাগুলি, উত্তেজনা চরমে
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিষয়ে ভারত এখনো জোরালো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এমতাবস্থায় ভারতের একতরফা কোনো পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সমর্থন নাও পেতে পারে। তবে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যদি সামরিক সংঘর্ষের দিকে গড়ায়, তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইরান ও সৌদি আরব উভয় দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করছে। ইরান ও বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
এই সীমান্ত সংঘাত এবং পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে নতুন করে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্বাআলো/এস